বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির কিছু হয়ে গেলে আত্মহত্যার ঘোষণা দিয়েছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর।
মিন্নির বাবা বলেন, ‘দেশবাসী শুনে রাখেন, আমার মেয়ের কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করমু। আমার মেয়েকে চাপ দিয়ে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। মিন্নি নির্দোষ, রিফাত হত্যার পেছনে শুরু হয়েছে নোংরা রাজনীতি। প্রশাসনের লোকেরা শোনেন, আপনারা সঠিক তদন্ত করেন, তাহলে রিফাত হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।’
শনিবার (২০ জুলাই) সকাল ১১টায় কারাগারের মূল ফটকে মিন্নির সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কারাগারে গিয়েছিলাম। মেয়ের দিকে তাকাতে পারছি না। তাকে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের প্রতি অন্যায়ের সুবিচার চাই। সারা দেশের মানুষ দেখেছেন আমার মেয়ে কীভাবে তার স্বামীকে রক্ষার জন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করেছে। একটি প্রভাবশালী মহল আমার মেয়েকে ফাঁসিয়ে খুনিদের আড়াল করতে চাইছে।’
এ বিষয়ে বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন জানান, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এখানে জোর-জবরদস্তির কিছু নেই। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মিন্নি। এছাড়াও মামলায় আরও কয়েকজন সন্দেহভাজন পুলিশের নজরে রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রিমান্ড চলাকালীন মিন্নিকে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে হাজির করা হয়। মিন্নি সেই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দাবি করেন, ক্ষমতাসীনরা মিন্নির পক্ষে বরগুনার কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেননি। ঢাকা থেকে আইনজীবীরা আসবেন শুনে পুলিশ নির্যাতন করে তড়িঘড়ি আমার মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার মেয়েকে গ্রেফতার করে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখন আবার তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করানো হলো। এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে। আমি আইনি লড়াই করে সত্যটা বের করব ইনশাল্লাহ।
আমার মেয়ে জীবনবাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই তার অপরাধ? এসব কিছুই শম্ভু বাবুর (স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে বাঁচাতে আমাদের বলি দেয়া হচ্ছে।
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে নেয়া হলেও মিন্নির কাছে আমাদের যা জানার ছিল, তা জানা হয়ে গেছে। তাই শুক্রবারই তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে মিন্নি কী বলেছেন, সে সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।
২৬ জুন প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টারে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরদিন শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। তাতে মিন্নিকেই প্রধান সাক্ষী করা হয়।
এরপর (১৩ জুলাই) শনিবার মিন্নির শ্বশুর তার ছেলে রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নি জড়িত বলে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি করেন। এর থেকেই রিফাত হত্যা মামলাটি নতুন মোড় নেয়।
বিবার্তা/রবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]