শিরোনাম
মাগুরার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী ঢাকার ধর্ষণ মামলার আসামি!
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৯, ১৭:৪১
মাগুরার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী ঢাকার ধর্ষণ মামলার আসামি!
মাগুরা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পাঁচ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষার সময় ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জাবের শেখের (২২) পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। ভারী কাজ করতে না পারায় ছোট মুদির দোকান দিয়ে কোনমতে সংসারে সাহায্য করে জাবের ।


কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎ শ্রীপুর থানা পুলিশের মাধ্যমে ঢাকার রূপনগর থানায় একটি ধর্ষণ মামলার ২নং আসামি হিসেবে একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা আসে জাবেরর নামে।


তারাউজিয়াল গ্রামের প্রতিটি মানুষ যে ছেলেটিকে অসুস্থ ও ভাল ছেলে হিসেবে জানে তার নামে এমন পরোয়ানা গ্রামের কেউই মেনে নিতে পারছেন না।


খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে এ গ্রামেরই আর এক ধূর্ত ও মামলাবাজ আকমল মোল্যার নাম। যিনি টাকা আদায়ের জন্য ঢাকায় বসে এই পরিবারটিসহ ওই গ্রামের তিনজনকে আসামি করে ঢাকার একটি মেয়েকে দিয়ে এ ধরনের মামলা করিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।


এমনকি ওই গ্রাম থেকে ওহাব শেখ নামে এক ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হলেও তিনি ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।


সরজমিনে বর্গা চাষি কৃষক হাফিজার শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছেলে জাবেরের নামে ধর্ষণ মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর পেয়ে পরিবারটি মুষড়ে পড়েছে। গ্রেফতার এড়াতে জাবের দোকানটি বন্ধ করে অসুস্থ অবস্থায় পালিয়ে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছে।


জাবেরের বাবা হাফিজার শেখ অভিযোগ করে বলেন, একই গ্রামের আকমল মোল্যা নামে এক ব্যক্তি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঢাকায় ছোট ছেলে জাবেরসহ ওই গ্রামের রাজু মোল্যা ও আকমল মোল্যার আপন ছোটভাই আলম মোল্যার নামে মোসাম্মৎ বিপুল নামে এক নারীকে দিয়ে ঢাকায় এ মিথ্যা মামলাটি করিয়েছে।


এ ঘটনার স্থান হিসেবে ওই নারী ঢাকার রূপ নগর হিসেবে উল্লেখ করলেও মামলার ২ ও ৩ নং আসামি জাবের শেখ ও আলম মোল্যা কোনদিন ঢাকায়ই যায়নি বলে দাবি করেন হাফিজার শেখ।


মামলার অপর আসামি আলম মোল্যার স্ত্রী রূপিয়া বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমার স্বামী অত্যন্ত সহজ সরল। দিনমজুরি করে তাদের সংসার চলে। কিন্তু বড় ভাই আকমল মোল্যার সাথে একটি টারকি মুরগি মেরে খাওয়া নিয়ে সামন্য মনমালিন্য হয়। এরপর ভাই আকমল হোসেন ঢাকায় গিয়ে বিপুল নামে এক মহিলাকে দিয়ে আদালতে একটি মামলা করিয়েছে। যে মেয়েটিকে আমার স্বামী কখনও চিনেও না।


তিনি বলেন, ওই মামলা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। শ্রীপুর থানা থেকে পুলিশ এসে আমার স্বামীর নামে ওয়ারেন্ট আছে জানালে আমরা রীতিমত আতস্কে পড়ে গেছি। সামন্য ঘটনায় ভাইয়ের বিরুদ্ধে কেউ এমন গুরুতর মামলা দিতে পরে এটা আমরা ভাবতেই পারছি না। আমার স্বামী বাধ্য হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সংসার চালাতে আমার ১০ম শ্রেণীতে পড়া ছেলে অন্যের ক্ষেতে মজুর দিতে বাধ্য হচ্ছে।


স্থানীয় সব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বর তারাউজিয়াল গ্রামের বাসিন্দা বাদশা মোল্যা জানান, আকমল এলাকায় একজন ধূর্ত ও মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে নিজ গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে থাকছে। সুযোগ বুঝে গ্রামের সাধারণ ও সহজ সরল লোকজনকে নানারকম হয়রানি করে টাকা আদায় করাই এখন তার কাজ।


তিনি বলেন, জাবেরের বাবার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করায় তা না পেয়ে জাবেরকে একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার আসামি করেছে। এখন টাকা দিলে ওই ধর্ষণ মামলা তুলে নেয়া হবে বলে সে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাঠাচ্ছে। এমনকি সামান্য সাংসারিক মনমালিন্য থেকে আকমল তার আপন ছোটভাই আলম মোল্যাকেও ওই ধর্ষণ মামলার আসামি করেছে। একই গ্রামের প্রতিবেশী রাজু মোল্যার সাথেও পারিবারিক বিরোধের কারণেই সে এ মামলা করেছে।


এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে আকমলকে গ্রেফতারসহ পরিবারগুলির হয়রানি বন্ধের আহবান জানান তিনি।


মামলার সাক্ষী ওই গ্রামের ওহাব শেখ জানান, মামলার ২ নং আসামি জাবেরর বড় ভাই আবজাল শেখের সাথে কিছুদিন আগে তার স্থানীয় একটি ঘটনা নিয়ে হাতাহাতি হয়। এতে আমারে সে ঢাকার ওই মামলায় সাক্ষী করে আকমল। আমি তাকে সাক্ষী থেকে আমার নাম কাটিয়ে দিতে বললে সে সাক্ষী থেকে আমার নাম কাটার জন্য ৪০ হাজার টাকা দাবি করে।



আমতৈল মাধ্যমিকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমান, তারাউজিয়াল গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা হবিবুর রহমান, মুন্সী ইউনুস আলী, ময়ুরুন নেসাসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, পাঁচ বছর আগে স্কুলেই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পরে জাবের। পরে স্কুলের পক্ষ থেকে তাকে যশোরে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো ও চিকিৎসা করানো হয়। এরপর থেকে জাবের স্বাভাবিক লেখাপড়া করতে পারে না। সে ওই গ্রামের অত্যন্ত নিরীহ একটি ছেলে। ঢাকা তো দুরের কথা অসুস্থতার কারণে সে কখনো আশপাশের দুএক গ্রামের বাইরে কোথাও যায়না। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সে তেমন ভারি কাজও করতে পারে না। তাকে এভাবে হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে নাজেহাল করা খুবই খারাপ কাজ হয়েছে। আমরা মিথ্যা মামলাবাজ আকমলের গ্রেফতার, উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি চাই।



বাদি বিপুলকে মোবাইলে না পেয়ে তার ভগ্নীপতি মনিরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিপুলকে দিয়ে আকমল এ মিথ্যা মামলা করাচ্ছে। তিনি বারবার নিষেধ করা সত্তেও বিপুল তার কথা না শোনায় তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই বলে জানান।



এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীপুর থানার এসআই লুৎফর রহমান জানান, আমাদের কাছে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা এসেছে। আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করতে বাধ্য। এর বেশি আমাদের বলার কিছুই নেই।



মামলায় বিপুল নামে ওই নারী উল্লেখ করেন, ২২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখ রাতে মাগুরার তারাউজিয়াল গ্রামের রাজু মোল্যা, জাবের শেখ, আলম মোল্যা তিনজন মিলে তার ঢাকার রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসায় গিয়ে জোর করে ধর্ষণ করে।


এ ব্যাপারে ২৪ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। পরে ২৫ অক্টোবর রূপনগর থানায় মামলা দিতে গেলে তারা মামলা না নিয়ে আদালতে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেয়। সে মোতাবেক ২৯ অক্টোবরে তিনি বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল নং-০৩ ঢাকা এ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নং ৩২৮/২০১৮ দায়ের করেন।


তবে মোবাইল ফোনে তার বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা মামলা করানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত আকমল মোল্যা।


বিবার্তা/শ্রাবণ/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com