শিরোনাম
কুড়িগ্রামে বন্যার্তদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০১৯, ১৭:৫৩
কুড়িগ্রামে বন্যার্তদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭৫ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার এবং কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


এতে করে জেলার ৯ উপজেলার ৪ শতাধিক চরও দ্বীপচরসহ নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। লোকজন আশ্রয় নিতে শুরু করেছে পার্শ্ববর্তী উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এসব এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।


নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পানিবন্দী কিছু পরিবার নৌকার অভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু জায়গায় যেতে পারছেন না। অনেক পরিবার অন্যের নৌকা ধার নিয়ে উঁচু স্থানে আসতে শুরু করেছেন।


চরাঞ্চলগুলোতে শুকনো জায়গা না থাকায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষজন।


তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগড়াকুড়া এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের টি বাঁধের দেড়শ ফুট পানিতে ভেসে গেছে।


সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর এলাকার মিজানুর রহমান জানান, এই চরে যাদের নৌকা আছে তারা জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে উঁচু স্থানে চলে যাচ্ছে।আবার কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের নৌকায় উঁচু জায়গার চলে যাচ্ছে। কিন্তু যাদের নৌকা নেই বিপাকে পড়েছে তারা।


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মহির উদ্দিন জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে পেতে ঘরের ভিতর এক কমর পর্যন্ত পানি হয়েছে। ঘরের চৌকি ইট দিয়ে ভাসিয়ে কোনো রকমে কষ্ট করে ছিলাম যে, পানি কমা শুরু হলে আর অন্যত্র যেতে হবে না। কিন্তু পানি কমার পরিবর্তে শুধু বাড়তেছে। বাড়িতে আর থাকার উপায় নাই। এজন্য সড়কে এসে বাড়ির কয়েকটি টিন দিয়ে ছাপড়া ঘর তুলতেছি। এখানেই বউ বাচ্চা নিয়ে থাকতে হবে। রান্না করার উপায় নাই। শনিবার থেকে শুধু কাঠাল খেয়ে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাই নাই।


উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দই খাওয়ার চরের কালু মিয়া জানান, এই চরে আমরা শতাধিক পরিবার বসবাস করছি।সব পরিবারের ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।যাদের নৌকা আছে তারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু স্থানে যাচ্ছে আর যাদের নৌকা নেই তার মাচা উঁচু করে গরু ছাগল নিয়ে কষ্টে দিন পার করতেছে।পানি আরো বাড়তে থাকলে এই চরের সব মানুষকে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে।


উলিুপর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নটি ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থিত। এখানে চরাঞ্চলসহ প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী।কিছু পরিবার উঁচু সড়কে আশ্রয় নিচ্ছে। সরকারি ভাবে এখনো কোনো ত্রাণ না পাওয়ায় বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।


বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট কুড়িগ্রাম ইউনিটের ইউনিট লেভেল অফিসার এবিএম বায়েজিদ জানান, বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে যুব স্বেচ্ছাসেবকদের একটি টিম ২৪ ঘন্টা প্রস্তুত রয়েছে।প্রয়োজনে তারা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করবে। সেই সঙ্গে রেডক্রিসেন্টের উদ্যোগে পানি বিশুদ্ধ করণ মেশিন দিয়ে পানি বিতরণ করবে।


কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন থেকে ২৮০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা আজ (১৪ জুলাই) বিতরণ শুরু হয়েছে।


এছাড়াও নতুন করে ১ হাজার মেট্রিক টন চাল, ২০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার সকল সরকারি দফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।


কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত ৩০ ঘন্টায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com