শিরোনাম
পানির স্রোতে কেঁপে উঠছে তিস্তা অববাহিকা
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০১৯, ১৬:৫৮
পানির স্রোতে কেঁপে উঠছে তিস্তা অববাহিকা
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

তিস্তা নদীর পানির প্রচণ্ড স্রোত ধারায় পুরো তিস্তা নদীর অববাহিকা কেঁপে উঠছে। ফলে তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি ক্রমে আরো অবনতি ঘটছে।


শুক্রবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০ মিটার) ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে ভাটিতে তীব্রবেগে ধাপিত হচ্ছে। উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


শুক্রবার (১২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টায় তিস্তার পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম।


বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) তিস্তার পানি দুই দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ ও ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানের এই পানির ঢল সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি কপাট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।


শুক্রবার (১২ জুলাই) নতুন করে আরো ৩০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। তিস্তার হিংস্ররূপ এলাকাবাসীকে আতংঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে বলে বন্যা কবলিত ইউপি চেয়ারম্যানগণ দাবি করেছেন। এ ছাড়া তিস্তা বিপদসীমায় চলে যাওয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে পানির স্রোত বাঁধে আঘাত করছে।ফলে বাঁধগুলো হুমকীর মুখে পড়েছে।


এদিকে তিস্তায় পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেবমোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধটি রক্ষায় দুইদিন ধরে রাতভর স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মসিউর রহমান মামুন। জেলার তিস্তার তীরবর্তী বেশ কিছু বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।


জনপ্রতিনিধিরা জানান, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার পূর্ব সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের বির্স্তীর্ণ এলাকার ২৫টি চর ও গ্রামের পরিবারগুলো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।


তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরন কেন্দ্র জানিয়েছে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকাল ৯টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় ২৫ ও রাত সাড়ে ৯টায় আরো ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।


শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৯টায় তা কমে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা পাড়ের মানুষজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই হিসাব মানতে নারাজ। এলাকাবাসীর পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে দাবি বর্তমানে তিস্তা নদীর পানি কম করে হলেও বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড অজ্ঞাত কারণে নদীর পানির সঠিক হিসাব প্রকাশ করছে না।


সরেজমিনে দেখা যায় গত তিন দিনের চেয়ে নদীর গর্জন অনেকাংশে বেড়ে গেছে। নদীর উথাল পাতাল ঢেউ আর শোঁ শোঁ শব্দ করে পানি দ্রুত গতিতে ভাটির দিকে ধাপিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি প্রচণ্ড গতির স্রোত ধারায় পুরো তিস্তা নদী অববাহিকা কেঁপে উঠছে।


হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মসিউর রহমান মামুন জানান, গত তিন দিনের বন্যায় চেয়ে শুক্রবার উজানের ঢলের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এলাকার নিচু ও উচু স্থানে নদীর পানি প্রবেশ করেছে। চরাঞ্চলের গ্রাম গুলোর ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে তার এলাকার ৮ হাজার পরিবারের বসত বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলার গড্ডিমারী পুরো ইউনিয়নটি একেবারে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি আর পানি। হুমকীর মুখে পড়েছে সেখানকার রাস্তাগুলো। রাস্তার উপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হওয়ায় এলাকাবাসী বালির বস্তা দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্ট করছেন।


সিংগিমারী ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু বলেন, এই ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি বয়ে যাচ্ছে। নদী সংলগ্ন বসবাসরত পরিবারগুলো সতর্কাবস্থায় থাকার জন্য বলা হয়েছে। তিস্তায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে দুই সহস্রাধিক পরিবারের বসতবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।পনি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি বাড়ির উঠানে হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যা কবলিত পরিবার গুলোকে সহায়তা করার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করলেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কোনো সদস্য সরকারি ভাবে ত্রাণ সহায়তা পাননি।


হাতীবান্ধা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, তার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তা নদীর অববাহিকায়। তিস্তায় সামান্য পানি বাড়লেই ওইসব ইউনিয়নের পরিবার গুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েন। পানিবন্দীদের তালিকা জেলা অফিসে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ বরাদ্দ এসেছে।


জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, পানি বন্দি লোকজনের ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ৬৮ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।


দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, উজানের ঢল ও বৃষ্টিাপাতের কারণে আমরা সর্তকাবস্থায় রয়েছি।শুক্রবার তিস্তা নদীর পানি সকাল ৯টায় বিপদসীমা অতিক্রম করে ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে মর্মে তিনি স্বীকার করেন।


বিবার্তা/জিন্না/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com