শিরোনাম
লামায় পাহাড়ে ঝুঁকিতে ২০ হাজার মানুষ
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০১৯, ১৫:৩১
লামায় পাহাড়ে ঝুঁকিতে ২০ হাজার মানুষ
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গত কয়েক দিনের একটানা ভারী বর্ষণের কারণে বান্দরবানের লামা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে ঝূঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসন নিয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কিছুতেই সরতে রাজি হচ্ছে না এসব লোকজন।


উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের মাইকিং, আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া, পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং দুয়ারে-দুয়ারে গিয়ে প্রশাসনের অনুনয়-বিনয় কিছুতেই গলছে না পাহাড়ে বসবাসরতদের মন।


অনেক তাগাদা দেয়ার পর সোমবার পৌরসভা এলাকার ২৬ পরিবারের লোকজন নিরাপদে আশ্রয় নিলেও মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে এখনো প্রায় সাড়ে চার হাজার পরিবারের মানুষ পাহাড়ের চূড়া, কোল ঘেষে ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।


পাহাড় ধসের দুর্ঘটনা এড়াতে ইতোমধ্যে উপজেলার ৫৫টি বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালের আদশশুমারি অনুযায়ী উপজেলার ৬৭১.৮৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৬ হাজার ৬৩টি পরিবার রয়েছে। আগের তুলনায় বর্তমানে এর সংখ্যা বাড়বে বলে পরিসংখ্যান অফিস সূত্র জানিয়েছে। সে হিসেবে এ উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি মিলে প্রায় দু’লাখ মানুষের বাস। এদের মধ্যে ৮০শতাংশ মানুষ ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ৮শ-১৫শ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া, পাদদেশ কিংবা পাহাড়ের কোলঘেঁষে বসবাস করে আসছে। যার বেশিরভাগই পুনর্বাসিত ও অজ্ঞ।


তারা ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করে এসব উপজেলায় পুনর্বাসিত হয়ে পাহাড় কেটে বসবাস শুরু করে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে।


বেসরকারি হিসেব মতে, লামা পৌরসভা ও লামা সদর, গজালিয়া, রূপসীপাড়া, সরই, আজিজনগর, ফাঁসিয়াখালী, ফাইতং ইউনিয়নে সাড়ে চার হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।


একটানা বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধসে ওই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর জানমালের আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসনকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। সর্বশেষ গত বছরের ৩ জুলাই উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি কালাইয়া পাড়ায় পাহাড় ধসে এক পরিবারের শিশুসহ তিনজন মারা যায়। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় উপজেলায় বসতঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে ৪৬ জন মারা যায়।


সরেজমিন দেখা যায়, লামা পৌরসভা এলাকার চেয়ারম্যান পাড়া, নারকাটাঝিরি, হাসপাতাল পাড়া, বরিশাল পাড়া, বড়নুনারবিল পাড়া, চাম্পাতলী, নয়াপাড়া, সাবেকবিলছড়ি, রাজবাড়ী, কলিঙ্গাবিল, কাটাপাহাড়, মধুঝিরি এবং লামা সদর ইউনিয়নের লাইনঝিরির আগা, পশ্চিম মধুঝিরি, ডলুঝিরি, হাসপাতাল পাড়ায় পাহাড় ধস ঝুঁকিতে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। এসব পরিবারের ঘরগুলোর কিছু পাহাড়ের পাদদেশে, কিছু কোলজুড়ে আবার কিছু চূড়ায়।


একইভাবে উপজেলার আজিজনগর, ফাইতং, রুপসীপাড়া, গজালিয়া ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতবাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার। তাদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র মানুষ। তার মধ্যে সাড়ে চার হাজার পরিবারই অতিঝুঁকিতে বসবাস করে আসছে।


পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষের জন্য বর্তমানে উদ্বিগ্ন উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাগাদাসহ নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হলে ২৬টি পরিবার নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে কিংবা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও বেশিরভাগ এখনো সরে যায়নি।


গত কয়েকদিনের বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। এ বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধসে জানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।


ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী জামাল, আনোয়ার, বদিউর রহমানসহ আরো অনেকে বলেন, আমরা গরীব মানুষ, এখানে সমতলের জমির দাম আকাশ ছোঁয়া। এত দরে আমাদের পক্ষে জমি কেনা অসম্ভব। পাহাড়ের জমি সমতল ভূমির চেয়ে অনেক সস্তা। তাই পাহাড়ের জমি কিনে বসবাস করছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য মাইকিং শুনেও কাজে লাগাতে পারছি না। সরকার যদি আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে যেতে পারতাম।


এ বিষয়ে ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, বার বার তাগিদ দেয়ার পরও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীরা সরে যাচ্ছে না। সরে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি ঝুঁকিপূর্ণদের বরাত দিয়ে বলেন, এলাকার বেশির গ মানুষ গরীব। তাই নতুন করে নিরাপদ স্থানে ঘর তৈরি করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।


লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা এলাকায় যারা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বার বার মাইকিং এর মাধ্যমে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে খোলার পাশাপাশি আশ্রিতদের জন্য খাবার, পানি ও তাদের বাড়ি পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেউ যেতে চায় না।


এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও মাইকিং এর মাধ্যমে বারবার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষকেও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিতে বলা হয়েছে।


তিনি বলেন, এছাড়া উপজেলায় ৫৫টি বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পৌরসভা এলাকার ২৬টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বাকি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলো সরে না গেলে প্রশাসন কঠোরতা অবলম্বন করবে।


বিবার্তা/আরমান/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com