শিরোনাম
যোগ্যতায় পুলিশে চাকরি পেলেন ১৩৬ জন
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০১৯, ২১:৩৩
যোগ্যতায় পুলিশে চাকরি পেলেন ১৩৬ জন
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে টাঙ্গাইলে কনস্টেবল পদে ১৩৬ জনের চাকরি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তবে একেবারে বিনা পয়সায় নয়, সরকার নির্ধারিত মাত্র ১০৩ টাকায় তাদের চাকরি দেয়া হলো।


যাচাই বাছাই শেষে রোববার রাতে চূড়ান্ত ঘোষণাও দেয়া হয়। রাতে পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় পুলিশ লাইন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ সুপার সকলকে মিষ্টি মুখ করান এবং তাদের শুভেচ্ছা জানান।


আর এর মধ্যে দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় মাত্র ১০৩ টাকায় ১৩৬ জনকে পুলিশে চাকরি দিয়ে দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করলেন।


জেলা পুলিশ জানায়, কনস্টেবল নিয়োগ পাওয়ার জন্য ৬ হাজার ৭৫৭ জন চাকরি প্রত্যাশী অংশ নেয়। আর এদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় দিয়েছেন ৭৩৩ জন। আর লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীত হয় ২৫৩ জন। এর মধ্য থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয় ১৩৬ জনের নাম। এর মধ্যে ৩৩ জন নারী রয়েছে। আর ১০৩ জন হলো পুরুষ। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই কৃষক, দিনমজুর, রিকশা চালক, অটোচালকের মতো হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান।


৩৩ নারীর মধ্যে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দক্ষিণ নাগরপুর এলাকার কৃষক পরিবারের সন্তান বন্যা আক্তার। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে বন্যা সবার ছোট। অভাবের সংসারের হাল ধরার মতো কেউ নেই। বাবা সোরহাব মিয়া দরিদ্র কৃষক। তার পক্ষে বড় এ সংসার চালানো দায়। ছোট বেলা থেকেই পুলিশে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল বন্যা আক্তারের। চাকরি করে পরিবারের দুঃখ দূর করবেন। কিন্তু অভাবের সংসারে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়ার সেই সামর্থ নেই তার। কিন্তু এবার তিনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যেমে জেনেছেন চাকরিতে কোনো ঘুষ লাগবে না। ১০৩ টাকায় পুলিশের চাকরি পাওয়া যাবে। পুলিশের এমন প্রচারণা দেখে আবেদন করেছিলেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকেও তাকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। শরীরিক ফিটনেস কিংবা মেধা দু’টিই ছিল তার। তাই আত্মবিশ্বাসও ছিল তার। মাত্র ১০৩ টাকায় হয়েও গেল চাকরি।


এ ব্যাপারে বন্যা আক্তার বলেন, ‘আমি কখনই কল্পনাই করতেই পারিনি যে ১০৩ টাকায় চাকরি পাবো। কখনই এমন হয়নি। কিন্তু ঘুষ ছাড়াই চাকরি দিয়ে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমার বাবা একজন কৃষক। আমার এ চাকরিটি খুব দরকার ছিল। আশা করছি এখন আমি পরিবারের হাল ধরে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে পারবো।’


এদিকে নাগরপুর উপজেলার ভাড়রা গ্রামের রিনি আক্তার নামের এক কলেজ ছাত্রীর চাকরি হয়েছে। তার ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়ার। পুলিশ হয়ে মানুষের সেবা করবে। আর তার এই স্বপ্ন পূরণ হলো। পরিবারও তাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে। তিনি পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ঘুষ ছাড়াই সরকারি নির্ধারিত মূল্য ১০৩ টাকায় চাকরি পান তিনি। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রিমি মেঝো।


এ ব্যাপারে রিনি আক্তার বলেন, ‘যখন থেকে আমার বুদ্ধি হয় তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল পুলিশের চাকরি করে জনগণের সেবা করার। প্রথম দিকে আমার আবু-আম্মু আমাকে সায় না দিলেও পরবর্তীতে আমার উৎসাহ যোগায়। পরবর্তীতে চলতি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ঘুষ ছাড়াই আমার স্বপ্ন পূরণ হয়।


তিনি আরো বলেন, মানুষের ধারণা ছিল টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হবে না, কিন্তু এবার এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঘুষ ছাড়াই আমরা চাকরি পেয়েছি। এতে আমি অনেক খুশি। মূলত স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটুর সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশের এ চাকরি পেয়েছি।


এ ব্যাপারে রিনি আক্তারের মা বিনা বেগম বলেন, আমার পেয়ে ঘুষ ছাড়াই চাকরি পেয়েছে এতে আমি খুবই খুশি। আমি দোয়া করি সে যেন মানুষের সেবা করতে পারে।


এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, আমি আশাবাদি ছিলাম স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই মাত্র ১০৩ টাকায় ১৩৬ জন যুবক-যুবতীকে চাকরি দেয়া হয়েছে। মাননীয় আইজিপি মহোদয় ও ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি’র প্রেরণা আমাদের এ সাহস জুগিয়েছে। যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। প্রকৃত মেধাবিরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com