প্রাইভেট পড়িয়ে শিক্ষাযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থী মানসুরা মীম। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা দিয়ে আলহাজ জালালউদ্দিন কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হলেও আর্থিক সংকটে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের চর চাপলী গ্রামের রিকশাচালক নাসির হাওলাদারে মেয়ে মীম। ঘরে অসুস্থ মা জাকিয়া বেগম মৃত্যুশয্যায়। প্রায় দুই মাস হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করালেও আর্থিক সংকটে এখন ঘরে বসে কোনোরকম চিকিৎসা হচ্ছে। বাবা রিকশা চালিয়ে যা পান, তা দিয়ে অসুস্থ মায়ের ওষুধ, দুমুঠো ভাত যোগাড় ও পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া ভাই আলাইহীমের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে মীমকে কলেজে পড়ানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাত্র ১০ বছর বয়সে সহপাঠীরা যখন বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যেত, সে সময়ে মীমকে যেতে হয়েছে সুতার কারখানায়। দিনরাত দুই বছর কারখানায় কাজ করায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়া হয়নি। ক্ষুধা ও দারিদ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে দুই বছরের জমানো টাকা দিয়ে পরিবারের অসম্মতিতেই অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয় মীম। এরপর সে এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। কিন্তু মেধাবী এ মীমের স্বপ্ন হয়তো থেমে যাবে উচ্চশিক্ষা শুরুর শুরুতেই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মীম জানায়, লেখাপড়ার ইচ্ছা না থাকলে এখন হয়তো কোনো কারখানার শ্রমিক হতাম। শিক্ষাজীবনের দুই বছর ঝরে গেছে কারখানায় কাজ করার ফলে। আমার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু কে পূরণ করবে আমার সেই স্বপ্ন? বাবা রিকশা চালান। ঘরে অসুস্থ মা। কলেজে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু বইখাতা কিনতে পারিনি।
মীমের মা জাকিয়া বেগম বলেন, তার মতো এত কষ্ট করে কেউ পড়ে না। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর টাকার অভাবে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে পারিনি। দুই বছর ঢাকায় সুতার কারখানার কাজ করে ১০ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেছে সে। এত কষ্ট করে ও পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে।
চাপলী গ্রামের স্কুলশিক্ষক মো. নুরুন্নবী জানান, মীম খুবই মেধাবী। কিন্তু ওর পরিবারে ঠিকমতো চুলা জ্বলে না। এ কারণে পরিবারটি তাকে নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায়।
বিবার্তা/রবি/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]