শিরোনাম
লালমনিরহাটে ২৭ জন যোগ্য প্রার্থী পেল পুলিশে চাকরি
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৯, ২০:৪১
লালমনিরহাটে ২৭ জন যোগ্য প্রার্থী পেল পুলিশে চাকরি
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পুলিশের চাকরির কথা শুনলেই লাখ লাখ টাকার খেলা প্রায়ই শোনা যেত। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে চাকরি প্রার্থীদের নিঃস্ব হবার উদহারণও নেহায়েত কম নয়। সেখানে নিয়ম আনুযায়ী মাত্র ১০৩ টাকা দিয়ে পুলিশের চাকরি পাওয়ার কথা রীতিমত অবিশ্বাস্যই বটে। সেই অবিশ্বাস্য কাজই করেছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক। নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে তার প্রত্যক্ষভাবে তদারকিতে মাত্র ১০৩ টাকায় ২৭ জন যোগ্য প্রার্থীই কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন।


পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম গ্রামের মেহের আলীর পুত্র এনামুল হক তার আনন্দঘন অনুভূতি নিয়ে বলেন, ‘সবাই বলে টাকা ছাড়া পুলিশের চাকরি হয় না। ব্যাংক ড্রাফটটা তখনো করিনি। আমাদের এলাকায় শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবলে নিয়োগ দেয়া হবে -এমন মাইকিং শোনার পর বাড়ি থেকে সবাই প্রার্থী হতে সাহস যোগায়। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে বিনা টাকায় চাকরিটা আমার হয়েছে।’


একই অনুভুতি জেলা শহরের খোচাবাড়ি এলাকার আনোয়ার হোসাইনের পুত্র মনিরুল ইসলামের। দিনমজুর বাবার তিন সন্তানের বড় ছেলে মনিরুল। অভাবের সংসারে টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। সদ্য সমাপ্ত এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন মনিরুল।


মনিরুল বলেন, ‘আজকেও পুলিশ সুপার মহোদয় আমাদের ডেকে বলেছেন যদি কেউ এখনো কোনো টাকা চায় সোজা আমাকে ফোন করে জানাবেন।কি বলে যে পুলিশ সুপার স্যারকে কৃতজ্ঞতা জানাবো তার ভাষা আমার জানা নেই।’


সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক বিমল চন্দ্র রায়। সামান্য জমিতে চাষবাস করে তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছেন। বড় মেয়ে প্রমীলা মেধাবী ছাত্রী।স্থানীয় অনেকের কাছে শুনেছেন লালমনিরহাটের বর্তমান পুলিশ সুপার অত্যন্ত সৎ এবং একজন মহৎ ব্যক্তি।তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শুধু শারীরিক ও মেধার যোগ্যতায় চাকরি দেবেন। সেই বিশ্বাসে প্রমীলাকে পাঠিয়ে দেন পরীক্ষা দিতে। ঘুষ ছাড়া মেয়ের চাকরি হওয়ায় ভীষণ খুশি বিমল।


তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আমার তো টাকা পয়সা নাই, মেয়ের চাকরিও এ জীবনে হবে না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অপার ইচ্ছায় আমার মেয়েটা আজ বিনা পয়সায় পুলিশের চাকরি পেয়েছে।’


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছর এ জেলায় পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় সহশ্রাধিক প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ১৬৫ জন। তাদের মধ্য থেকে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন ২৭ জন।


এদের মধ্যে সাধারণ কোটায় ১০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী এবং পোষ্য কোটায় ২ জন চাকরি পেয়েছেন। এর আগে গত ২৫ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল’ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ২৫ জুন জেলা পুলিশ লাইন্সে সকাল ৮টা থেকে রাত পর্যন্ত শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়।২৭ জুন অনুষ্ঠিত হয় লিখিত পরীক্ষা। পরে ১ জুলাই লিখিত ফলাফল প্রকাশের পর ওই দিনই মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষ ২ জুলাই চুড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়।


পুলিশের চাকরিতে এমন পরিবর্তনে রীতিমত হতবাক স্থানীয় সচেতন মহল। সবার প্রত্যাশা সততার এমন নিদর্শন কর্মক্ষেত্রে তারাও নিজেদের উজাড় করে দিবেন দেশ ও জাতির


পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, গত কয়েকবছর ধরে আমরা এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি যে, যাতে কেউ বিভ্রান্ত না হয়। যাতে দালালের খপ্পড়ে না পড়ে। এবার এর প্রভাবটা বেশি পড়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছিল যাতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়।


সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে রশিদুল হক আরো বলেন, সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখে পাশে থাকতে হবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যাতে দেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে।


বিবার্তা/জিন্না/জাহিদ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com