শিরোনাম
ভাঙন আতঙ্কে ধরলা পাড়ের মানুষ
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০১৯, ১১:৫৩
ভাঙন আতঙ্কে ধরলা পাড়ের মানুষ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লালমনিরহাটে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর পাড়ের মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙনের আতঙ্ক। ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধরলার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুইদিনে নদীর পানি কিছুটা কমলে নদীর দুই ধারে শুরু হয় ভাঙন।


জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও ভাঙন আতঙ্ক কমেনি ধরলা পাড়ের মানুষে মধ্যে। আতঙ্কে ইতোমধ্যে ধরলা পাড়ের মানুষজন তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে।


শনিবার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোঘলহাট ইউনিয়নের দ্বীপচর খারুয়া গ্রামে ধরলার তীরে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করে জেলা প্রশাসন।


স্থানীয়রা জানান, গত সপ্তাহে হঠাৎ ধরলার পানি কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ার পরে গত দুইদিনে তা কমতে থাকে। এতে দ্বীপচর খারুয়া গ্রামে প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দেয়। দুই তিনদিনের ব্যবধানে প্রায় ১০ থেকে ২০টি বাড়ি ধরলা নদীগর্ভে বিলীন হয়। ভাঙনের মুখে পড়ে খারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খারুয়া বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র। নদী থেকে এই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের দূরত্ব মাত্র ১২৬ ফিট। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে যে কোনো মুহূর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এই দুই ভবন।


শুক্রবার দিন ও রাতে দুই দফায় দ্বীপচর খারুয়া পরিদর্শন করে দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ প্রদান করেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর।


শনিবার সকালে ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে এটি রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এতে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পায় বিদ্যালয়, আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ কয়েকশ বাড়ি ও ফসলি জমি। তবে এখনো আতঙ্ক কাটেনি ধরলা পাড়ের লোকজনের।


ধরলা নদীর ভাঙনের তীব্রতা কমলেও আতঙ্কিত দ্বীপচর খারুয়ার ও বোয়ালমারী গ্রামের মানুষজন। বন্যার প্রথম ধাপে ভেঙেছে বেশ কিছু বাড়ি ও ফসলি জমি। পুনরায় বন্যা বা ভাঙন দেখা দিলে সব কিছু গ্রাস করতে পারে রাক্ষুসী ধরলা নদী। সামান্য জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িক ভাঙন রোধ করলেও তা স্থায়ী হবে না বলেও স্থানীয়দের দাবি। এজন্য তারা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো পার্শ্ববর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও রাস্তার পাশে বা অন্যের জমিতে নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসনে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।



দ্বীপচর খারুয়ার বাসিন্দা ফরিদুল, হাকিমুল্লাহ, ছামাদ, সাইফুল ইসলাম, আজগর, আফাছ আলী জানান, গত কয়েক দিনের ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় আশ্রয় নিয়েছি অন্যের জমিতে। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বিদ্যালয় মাঠের এক কোনায়।


এক মাস আগে ধরলার ভাঙনে বিলীন হয় মোঘলহাট গ্রামের সফিয়ার রহমানের বসতভিটা। ঘরগুলো সরিয়ে আশ্রয় নেন স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। সেখানে কোনো রকম একটি ঘর তুলে পরিবার পরিজনদের নিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।


তিনি বলেন, একবার নয়, গত তিন বছরে তিন তিনবার বাড়ি ভেঙে ধরলার নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। গতবছর সরকারি সহায়তায় বসত বাড়ি করেছেন। সেটাও এবার ভেঙে গেছে। এ বছর বিলীন হওয়ার এক মাস হলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে মেলেনি কোনো সহায়তা।


ধরলা নদীর কিনাড়ে মোঘলহাট গ্রামের সুরুজ আলী জানান, নদীর মুখে পড়েছে বাড়ি। কখন যে ধরলা তার বসতভিটা ভেঙে যায় এ আতঙ্কে সব সময় থাকতে হয়। বাড়ি সরানো জরুরি হলেও আশ্রয় নেয়ার মতো কোথাও কোনো জমি নেই। সব জমি ধরলা নদী ইতোমধ্যে গ্রাস করেছে। তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এখন তিনি।


দ্বীপচর এলাকার বাসিন্দা সরুজ আলী বলেন, আল্লাহ ছাড়া আমাগো বাঁচানোর আর কেউ নেই। সারাক্ষণ বুকটা থর থর করে কাঁপে বাজান। কোহন (কখন) যে সব কিছু ভেঙে নিয়ে যায় রাক্ষুসী ধরলা।


খারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে ২০০১ সালে সরকারিভাবে দ্বিতল ভবন করা হয়। এখন বিদ্যালয়টিতে ২৪০ জন শিক্ষার্থীর ও পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। কয়েক দিনের ভাঙনে আতঙ্কিত হলেও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করায় এখন আর ঝুঁকি নেই। তবে পানি বৃদ্ধি পেলে আবারো ভাঙন শুরু হতে পারে। তবে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, খারুয়া গ্রামে ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৫শত জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ধরলার ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে ইতোমধ্যে পুনর্বাসনে ঢেউটিন ও নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে। আরো ক্ষতিগ্রস্থ হলে ত্রাণ শাখায় বরাদ্ধ রয়েছে, প্রয়োজনে আবার ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা করা হবে।


তিনি বলেন, তবে খারুয়া গ্রামে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের কোনো খবর তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাদের পুনর্বাসন করা হবে বলেও জানান তিনি।


বিবার্তা/জিন্না/তাওহীদ/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com