শিরোনাম
বর্ষা এলেই বন্যা ও পাহাড় ধসের আতঙ্কে থাকে লামার ৪০ হাজার মানুষ
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০১৯, ১১:১৬
বর্ষা এলেই বন্যা ও পাহাড় ধসের আতঙ্কে থাকে লামার ৪০ হাজার মানুষ
মোহাম্মদ নুরুল করিম আরমান
প্রিন্ট অ-অ+

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বান্দরবানের লামা উপজেলার মানুষের মাঝে এক আতঙ্কের মৌসুমের নাম বর্ষা মৌসুম। এক টানা মুষলধারে বৃষ্টি নামলেই বিশেষ করে পৌরসভা এলাকায় দেখা দেয় বন্যা, পাহাড় ধস, নদী ও খালের দু’পাড় ভাঙ্গন।


তখন পৌর শহরের ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নদী তীরবর্তী, নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের কারো চোখে ঘুম থাকে না। রাতে না ঘুমিয়ে পাহারা দিয়ে বসে থাকতে হয় কখন বন্যার পানি তলিয়ে দেবে বসতঘর, দোকান, অফিস আদালত।


একই সময় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা আতঙ্কে থাকেন কখন আচমকা পাহাড় ধসে ঘরের ওপর পড়ে। আবার কখন নদী গর্ভে চলে যায় দু’পাড়ে অবস্থিত বসতঘর, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।


এ তিন আতঙ্কে একদিকে যেমন প্রতি বছর জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে চলেছে, তেমনি পুরো বর্ষা মৌসুম জুড়েই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয় ৪০ হাজার বাসিন্দাকে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


তারা এই আতঙ্ক থেকে পরিত্রান পেতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।


সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা মুষ ধারে বৃষ্টি হলেই উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর দু’কুল উপচে বন্যার সৃষ্টি করে। এ সময় পৌর শহরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। লামা-আলীকদম সড়কের একাধিক স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের চরম হিমশিম খেতে হয় দোকানের মালামাল নিরাপদে সরাতে। এছাড়া বন্যার কারণে উপজেলার হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়।


অপরদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিন বৃষ্টির পরই শুরু হয় পাহাড় ধস। স্থানীয়দের মতে, যুগ যুগ ধরে পাথরের বেষ্টুনি দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পাহাড়গুলো থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর তৈরি ও বৃক্ষ নিধন করা হয়। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে ফাটল ধরা পাহাড়গুলো ধসে পড়ে।


প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় মাইকিং করে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় হাজার হাজার পরিবার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেই বসবাস করছে। তাই একটু বৃষ্টি নামলেই পাহাড় ধস আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটায় তারা।


এদিকে, শুষ্ক মৌসুমের মরা নদী মাতামুহুরী বর্ষা এলেই রুদ্রমুর্তি ধারণ করে। অস্বাভাবিক স্রোতের টানে নদীর দু’পাড়ে তখন ভাঙন দেখা দেয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে পৌর এলাকা, লামা সদর ইউনিয়ন এবং রূপসীপাড়া ইউনিয়নের ব্যাপক জনবসতি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়।


এ বিষয়ে লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া বলেন, বর্ষা শুরু হতেই বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক শুরু হয়েছে। বন্যা শুরু হলে কোথায় তাদের মালামাল হেফাজত করবে, কিভাবে মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিবে, সে প্রস্তুতি নিয়ে তারা এখন থেকে ভাবছেন। কারণ বিগত বছরগুলোতে হঠাৎ বন্যার কারণে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।


তিনি আরো বলেন, লামাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।


লামা বাজার স’মিল এলাকার বাসিন্দা নবীর উদ্দিন, আলী আকবর, হোসনে আরা খুশু ও ইব্রাহীম জানান, মুষলধারে বৃষ্টি নামলে বন্যার আশংকায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসে থাকতে হয়। পরিবারের মূল্যবান জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। বর্ষা শুরু হতেই আবারো দুর্ভোগের কথা মনে তারা শংকিত হয়ে পড়েছেন।


এ বিষয়ে লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা এলেই পৌরসভা এলাকার মানুষের মাঝে বন্যা, পাহাড় ধস ও নদী ভাঙ্গন আতঙ্ক দেয়। এ সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পৌরসভা এলাকা পরির্দশন করে বন্যামুক্ত ও নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য কিছু পরিকল্পনা নিয়েছেন। আশা করি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।


বিবার্তা/নুরুল/জাকিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com