তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে বন্যায় ডুবে গেছে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলো। পানিতে তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে বিদ্যালয়ের পাঠদান।
লালমনিরহাটে বুধবার তিস্তার ডান তীরের বিদ্যালয়গুলোর মাঠে চার দিকে এমন পানি দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মঙ্গলবার হঠাৎ তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলো বন্যায় প্লাবিত হয়। পানিতে বন্দি হয়ে পড়ে জেলার প্রায় আট হাজার পরিবার। পানিতে তলিয়ে যায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠানো অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে অভিভাবকরা।
জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়গুলো হলো- গোবর্দ্ধন হায়দারীয়া উচ্চ বিদ্যালয়, গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শপাড়া এমএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসমাইলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোবর্দ্ধন চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয় যাওয়ার রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় কলাগাছের ভেলায় চরে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ রাখার দাবি আমাদের।
অভিভাবকরা আরো জানান, রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় যাত্রা অনিরাপদ এবং বিদ্যালয়গুলোর মাঠে হাঁটু সমান পানি ও কিছু বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান জানান, তার ইউনিয়নের ছয়টি বিদ্যালয়ে পাঠদানে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও কয়েকটি বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদানে সম্পূর্ণরূপে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্কুল বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।
গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফা আক্তার জানান, মঙ্গলবার সারাদিনই ভাল ছিল। বুধবার বিদ্যালয়ে এসে দেখেন বিদ্যালয়ের চার দিকে পানি আর পানি। বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তাও নেই।
তবে বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু স্কুল খোলা রাখতে বলা হয়েছে।
গোবর্দ্ধন চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী শফিকুল ইসলাম জানান, তার বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে হাঁটু সমান পানি, এতে পাঠদান সম্পূর্ণরূপে অনুপযোগী হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসেনি। নদীর কোল ঘেঁষা ও নিচু অঞ্চলে হওয়ায় সামান্য বন্যায় শ্রেণি কক্ষে পানি ঢুকে পড়ে।
শুধু আদিতমারী উপজেলায় নয়। জেলার পাঁচটি উপজেলায় তিস্তার ডান তীরের অনেক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র বিরাজ করছে। তবে তিস্তায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি ঘটলেও বাকি তিন উপজেলায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পানি বা জেলায় বন্যা চলছে সেটা আমার জানা নেই। কেউ বিষয়টি বলেনি। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলায় কতটি বিদ্যালয় বন্যা কবলিত এলাকায় রয়েছে সেটাও তার জানা নেই বলেও জানান তিনি।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদ সীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়। এ পয়েন্টে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। তবে মধ্যরাত থেকে পানি প্রবাহ কমতে থাকে। বুধবার এ পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে।
বিবার্তা/জিন্না/তাওহীদ/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]