শিরোনাম
বিব্রত ওসি মোয়াজ্জেমের পরিবারের সদস্যরা
প্রকাশ : ১১ জুন ২০১৯, ১৮:৫১
বিব্রত ওসি মোয়াজ্জেমের পরিবারের সদস্যরা
এইচ আর তুহিন, যশোর
প্রিন্ট অ-অ+

ফেনীর জেলার সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের পরিবারের সদস্যরা বিব্রত অবস্থায় আছেন। ওয়ারেন্ট জারির পর পরিবারের সঙ্গে নেই যোগাযোগ। তারপরও পরিবারের সদস্যরা বিব্রত নানা জনের প্রশ্নবাণে।


যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি। পৈত্রিক দ্বিতল বাড়িটিতে ছোট দুই ভাই ও একমাত্র বিবাহিত বোন মায়ের সঙ্গে এখানে বসবাস করেন। মোয়াজ্জেমের স্ত্রী-সন্তানদের কেউ থাকেন না।


মঙ্গলবার বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, আদালতের ওয়ারেন্ট জারির পর থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। কোথায় আছেন, কেমন আছেন, সেটিও তাদের জানা নেই।


ওসি মোয়াজ্জেমের বাবার নাম খন্দকার আনসার আলী। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। তার এক ভাই সৌদি আরবে ও আরেক ভাই আমেরিকা প্রবাসী। তাদের আদি বাড়ি ঝিনাইদহের সদর উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামে। বাবার চাকরি সুবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে যশোর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ১৯৯৭ সালে উপ-পরিদর্শক পদে পুলিশে যোগদান করেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ২০১০ সালের দিকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। প্রায় দেড় বছর সোনাগাজী থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করেছেন।


ওসি মোয়াজ্জেমের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে জীবনে কোনো অন্যায় কাজ করেনি। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার ছেলে নিরাপদে ফিরে আসুক, এটাই আমার দাবি। নুসরাত হত্যার বিচার হোক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। আমার ছেলের জন্যই নুসরাত হত্যাকারীদের ধরা পড়েছে।


ওসি মোয়াজ্জেমের ভাই আরিফুজ্জামান খন্দকার বলেন, ওয়ারেন্ট জারির (২৬মে) পরে আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি ভাই। আগে নিয়মিত কথা হতো। এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন জানি না।


তিনি বলেন, নুসরাত হত্যার মূল মামলা বাদ দিয়ে ভাইয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাইবার ক্রাইম মামলা নিয়ে বেশি তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মূল আসামিদের অনেকেই এখনও গ্রেফতার হয়নি।


আরিফুজ্জামান আরো বলেন, নুসরাতের যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে, সেটি ভাই প্রকাশ করেনি। অন্য একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছে। এই অপরাধে সাইবার ক্রাইমের মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ ওই ভিডিওটিই নুসরাতের দেয়া বড় ডকুমেন্ট। যার ভিত্তিতে ভাই অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করেছিল। এই ঘটনার পর নানা রকম কথা শুনতে হচ্ছে।


ওসি মোয়াজ্জেমের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী উম্মে হানি দাবি করেন, নুসরাতের শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িতদের আটক করা সহজ ছিল না। ভাই সেটি করতে পেরেছিলেন নুসরাতের বক্তব্যের ভিডিওর ভিত্তিতে। আমাদের ধারণা তিনি সেফটি ডকুমেন্ট হিসেবে ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন। তবে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেননি। টেবিলের ওপর ফোন রেখে বাথরুমে গিয়েছিলেন। এই ফাঁকে তার মোবাইল থেকে ভিডিওটি হস্তান্তর হয়েছিল।


পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোয়াজ্জেম হোসেন ওসি হিসেবে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও নিয়মবর্হিভূতভাবে নুসরাতের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারায় (২৬, ২৯ ও ৩১) ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই।


তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ভিকটিম নুসরাতকে ওসির কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার দুই বান্ধবী নাসরিন সুলতানা, নিশাত সুলতানা এবং সোনাগাজি পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা পাশের কক্ষে বসা ছিলেন। ভিকটিমের দুই বান্ধবীর বক্তব্য অনুযায়ী ভিডিও ধারণ করার পূর্বে ওসি মোয়াজ্জেম মুখের নেকাব খুলতে নুসরাতকে বাধ্য এবং দফায় দফায় বিব্রতকর প্রশ্ন করেন।


আপত্তি জানালে ওসি তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, এই ভিডিওটি সম্পর্কে কেউ জানবে না। যৌন নিপীড়নের শিকার একজন ভিকটিমের সঙ্গে ওসির এ রকম অমানবিক আচরণ অপেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে।


এদিকে নুসরাত যখন চিকিৎসাধীন ছিলেন তখনও আসামিদের গ্রেফতার না করে মামলা দায়ের বিলম্বিত করার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। ৮ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যুও পর প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনায় কোনো আসামি ছাড় পাবে না ঘোষণা দিলে ওসি মোয়াজ্জেমের ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ সামনে চলে আসে। এরপর গত ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করেন। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এক পর্যায়ে ফেনীর সোনাগাজী থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং রংপুর রেঞ্জে তাকে সংযুক্ত করা হয়। রংপুর রেঞ্জে যোগ দিলেও ঈদের পর তাকে আর খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।


গত ২৬ মে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ১৭ জুন পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়।


বিবার্তা/তুহিন/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com