শিরোনাম
রাজশাহীতে কোটি টাকার জমি নিয়ে উত্তেজনা
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:২১
রাজশাহীতে কোটি টাকার জমি নিয়ে উত্তেজনা
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ৬ শতাংশ জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই পক্ষই দাবি করছে, জমিটি তার। এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমাও হলেও সমস্যার সমাধান কিছুই হয়নি। বরং দিনকে দিন পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে।


নগরীর বর্নালী মোড় এলাকার এই জমিটি নিজের স্ত্রীর নামে কেনা সম্পত্তি বলে দাবি করছেন স্থানীয় মোসলেম আলী নামে এক ব্যক্তি। তবে এই জমি নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বলে দাবি করছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র নিযাম-উল-আযীমের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আজমীর আহমেদ মামুন ও তার দুই ভাই। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে চলছে উত্তেজনা।


স্থানীয় লোকজন জানান, জমিটিতে কয়েক বছর আগে থেকে ৬টি দোকান ঘর রয়েছে। একটি দোকান ঘরে ছিল মোসলেম আলীর ছেলের গীটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আর বাকি পাঁচটি থেকে ভাড়া তুলতেন মোসলেম আলী। গত এপ্রিলে মেয়রের পিএস আজমীর আহমেদ মামুন ও তার ভাই রেজমীর আহমেদ সামান দোকানগুলোতে তালা দিয়ে দেন। এরপর মোসলেম আলী ফের দোকানগুলো নিজের দখলে নেন। পরে গত বুধবার রাতে সামান ও মামুন শ্রমিক নিয়ে গিয়ে দোকান ঘরগুলো ভেঙ্গে জমিটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার সকালেও তারা দোকানগুলো ভাঙছিলেন। পরে খবর পেয়ে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে র‌্যাব। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।


মোসলেম আলীর দাবি, ১৯৯৫ সালে স্থানীয় আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে ওই জমি তিনি তার স্ত্রীর নামে কিনেছেন। এরপর তিনি সেখানে মার্কেট নির্মাণ করেন। কিন্তু ওই সম্পত্তি স্বল্প মূল্যে জোর করে কিনে নেয়া হয়েছে বলে আব্দুল মান্নানের ছেলেরা সম্প্রতি মার্কেটটি দখল করার চেষ্টা করেন। মেয়র নিযাম-উল-আযীমের প্রভাব খাটিয়ে তারা ক্ষমতার জোরে জায়গাটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ এই জমির দলিল দিয়ে তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।


বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আজমীর আহমেদ মামুন জানান, অনেকদিন আগে মোসলেম আলীর কাছে তার বাবা আব্দুল মান্নান দেড় লাখ টাকা ধার নিয়েছিলেন। তবে টাকা নেয়ার সময় একটি স্ট্যাম্পে মোসলেম আলী তার বাবার স্বাক্ষর নেন। ওই স্ট্যাম্পে লেখা ছিল, যথাসময়ে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ওই জমি মোসলেমের নামে লিখে দেবেন তার বাবা। পরবর্তীতে তার বাবা টাকা পরিশোধ করতে না পারলে কৌঁশলে ওই স্ট্যাম্পের ওপর ভর করে জমির দলিল করে নেন মোসলেম। বিষয়টি জানতে পেরে তার ভাই রেজমীর আহমেদ সামান আদালতে মামলা করেন। সে মামলা এখনও চলছে।


তিনি আরো জানান, ওই মামলাটি দায়েরের পর মোসলেম আলীও আদালতে একটি মামলা করেন। আদালতের বিচারক সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে নির্দেশ দেন। গত ২৬ অক্টোবর তিনি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ওই জমি রেজমীর আহমেদ সামানের ভোগদখলে আছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার আদালত তার পক্ষেই রায় দেন। এ দিন মামলার বাদী মোসলেম আলী আদালতে হাজিরও হননি।


রেজমীর আহমেদ সামান বলেন, আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এ জন্য আমাদের জমি হিসেবেই আমরা পুরনো দোকান ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলাম। জমির মালিকই মোসলেম আলী নন, তাই তার দোকান ভাঙচুরের প্রশ্নই ওঠে না। আমার ভাই সিটি মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী। এ জন্য তারা আমার ভাইকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।


মোসলেম আলীর বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান রিয়ন রবিবার সকালে জানান, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবারের দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় তার বাবা আদালতে আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বোয়ালিয়া থানায় জোর করে জমি দখলের একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।


বিবার্তা/রিমন/নাজিম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com