শিরোনাম
অনিয়ম ধরতে সদর হাসপাতালে ঝটিকা অভিযান মাশরাফির
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ১১:২৫
অনিয়ম ধরতে সদর হাসপাতালে ঝটিকা অভিযান মাশরাফির
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নড়াইল সদর হাসপাতালে ঝটিকা অভিযান চালিয়েছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা। এ সময় উঠে এসেছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার বাস্তব চিত্র। খেলোয়াড় মাশরাফিকে সবাই চিনলেও এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রে মাশরাফিকে দেখলেন নড়াইলবাসী।


জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগদানের আগে নিজের নির্বাচনী এলাকায় দু’দিনের সফরে মাশরাফি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন হাসপাতালকে। কাউকে কিছু না জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে টানা ২ ঘণ্টা নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফর চালান নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা।


সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র দুইজন নার্স দেখে তাদের ডিউটির ব্যাপারে খোঁজ নেন মাশরাফি। জানতে পারেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত নার্স থাকলেও ২-১ জন নার্স দিয়েই বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে। ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক নিচে নেমে এসে নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজ করেন মাশরাফি। নার্সদের কক্ষে তালা দেখতে পেয়ে টেলিফোনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এ সময় একজন সুপারভাইজারের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং অপরজনের ফোন খোলা থাকলেও রিসিভ করেননি।


রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে দেখেন এবং মোবাইলে ছুবি তুলে নেন। কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা এবং দুর্গন্ধ তাকে অত্যন্ত বিব্রত করে তোলে। তিনি এ ব্যাপারে জানার জন্য আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে ফোন করতে বলেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিথী খাতুন এসময় অফিসে উপস্থিত থেকে মাশরাফির নানা প্রশ্নের জবাব দেন।


মাশরাফি জানতে পারেন, হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট থাকলেও নার্সের কোনো সংকট নেই। এই মুহূর্তে ৭৩ জন নার্স রয়েছে ওই হাসপাতালটিতে।


এরপর মাশরাফি পুনরায় দোতলায় এসে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চেয়ে হাজিরা খাতা দেখেন। হাজিরা খাতায় সার্জারি চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আকরাম হোসেনের তিনদিনের অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে ছুটির আবেদন দেখতে চান। পরে জানতে পারেন ছুটি ছাড়াই সেই ডাক্তার তিনদিন অনুপস্থিত।


এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে টাইগার ক্যাপ্টেন প্রথমে রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করলে তিনি মাশরাফিকে রবিবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন। এ সময় নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি ডাক্তারকে বলেন, এখন যদি হাসপাতালের সার্জারী প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কী করবে? চুপ করে আছেন কেন? আপনি কি ফাইজলামি করেন? চাকরি করলে নিয়ম মেনেই করবেন।


এরপর সেই ডাক্তারকে তার কর্তব্যর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দ্রুত এলাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেন তিনি।


মাশরাফির হাসপাতালে আসার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মশিউর রহমান বাবু ও ডা.আলিমুজ্জামান সেতু।ও চলে এসেছেন।


হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে বসে মাশরাফি তত্ত্বাবধায়ক ডা.আব্দুস সাকুরকে ফোন করেন। সে সময় তিনি খুলনায় একটি সভায় অংশগ্রহণ করে মাগুরায় বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। স্টেশনে অবস্থান করার কথা জানিয়ে রাতের মধ্যেই তাকে হাসপাতালে চলে আসতে বলেন মাশরাফি। খবর পেয়ে একঘন্টার মধ্যেই সদর হাসপাতালে আসেন তত্ত্বাবধায়ক ডা.আব্দুস সাকুর।


এরপর হাসপাতালের নানা স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন এমপি মাশরাফি। তখন এক অন্য রূপ দেখে সবাই। এমপি সাহেবরা যে এমন রুপ ধারণ করতে পারেন এটা না দেখলে হয়তো বিশ্বাসই করত না নড়াইলবাসী।


আবর্জনায় পরিপূর্ণ ড্রেন ও নোংরা পরিবেশ দেখে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মশিউর রহমানের কাছে দূরাবস্থার কারণ জানতে চাইলে তিনি নড়াইল পৌরসভার উপর দায় চাপিয়ে কোনো রকমে রেহাই পান।


এ সময় উপস্থিত দুই চিকিৎসক এবং কর্মকর্তা মাশরাফির কাছে এই সকল ঘটনার খবর মিডিয়ায় প্রকাশ না করার জন্য উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন।
এছাড়া হাসপাতালের সংক্রামক ওয়ার্ডে গেলে রোগীরা নানা অভিযোগ করেন সংসদ সদস্যের কাছে। 'বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হয়'- এমন অভিযোগ শুনে তিনি হাসপাতালের বাইরের দোকানগুলোতে সরকারি স্যালাইন বিক্রি করা হয় কিনা তা দেখার জন্য নির্দেশ দেন। হাসপাতালের ওষুধ সংকট শুনে স্টোরকিপারকে ডাকেন পরে তাকে না পেয়ে রাতে আবার বৈঠক করবেন বলে বেরিয়ে যান।


একই বিষয় নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন, ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের সাথে বৈঠক করেন মাশরাফি। এ সময় তার সাথে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ছাড়াও হাসপাতালের অবকাঠোমো দেখভাল করা প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীও উপস্থিত ছিলেন।


অভিযোগ ও নিজের দেখা অনিয়মের ব্যাপারে বিষয়ে মাশরাফি হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সবার সাথে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এ সময় হাসপাতালের নানা অনিয়মের মধ্যে বাইরের অ্যাম্বুলেন্স, দালাল ও বিক্রয় প্রতিনিধিদের কঠোরভাবে দমনের নির্দেশ দেন। তিনি হাসপাতালকে মানুষের সেবার জন্য উন্মুক্ত করতে বলেন।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com