শিরোনাম
ফেনীতে ছাত্রীর গায়ে আগুন
চারজনেরই পরনে ছিল বোরকা, হাতমোজা ও চশমা
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২৯
চারজনেরই পরনে ছিল বোরকা, হাতমোজা ও চশমা
ফেনী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ফেনীর সোনাগাজীর আলিম পরীক্ষার্থী রাফি জাহান রাফির (১৮) গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া চারজনের পরনে ছিল কালো বোরকা, হাতে ছিল হাতমোজা এবং চোখে কালো চশমা। কারণে তিনি কাউকেই চিনতে পারেননি।


তবে চারজনের মধ্যে একজন নারীকণ্ঠে তার সঙ্গে কথা বলেছে। বাকি তিনজন কোনো কথা বলেনি। তারা রাফিকে ধরে প্রথমে গ্লাস থেকে তরল পদার্থ গায়ে ছুড়ে মারে, এরপর আগুন দেয়া হয়।


সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে শনিবার অগ্নিদগ্ধের শিকারের পর গুরুতর আহত অবস্থায় রাফি তার ভাইদের কাছে ঘটনার এভাবে বর্ণনা দেন। তার বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করে রেখেছেন বড়ভাই মাহমুদুল নোমান। রাফিের দুটি বক্তব্যের রেকর্ড তাদের কাছে রয়েছে।


অগ্নিদগ্ধ ওই পরীক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।


এদিকে রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা ঘটনায় এক শিক্ষকসহ দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আটক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আফছার হোসেন ও রাফির সহপাঠি আরিফুর রহমান।


সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রকৃত ক্লু উদাঘটনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কোনো কিছু বলা যাবে না।


অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর ভাই নোমান বলেন, শনিবার সকালে আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা ছিল রাফির। নোমান তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যান। তবে কেন্দ্রের প্রধান ফটকে নোমানকে নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা আটকে দেন। এরপর রাফি একাই হেঁটে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। নোমান বোনকে দিয়ে কেন্দ্রের কিছু দূরে চলে আসেন। এর ১৫/২০ মিনিট পরই নোমানের মোবাইলে বোনের অগ্নিদগ্ধের ঘটনার ফোন আসে। এরপর তিনি ফের কেন্দ্রে ছুটে যান। গিয়ে বোনকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান।


রাফিকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। পরে ফেনী সদর হাসপাতালে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।


পথে রাফির কাছে তার ভাইয়েরা ঘটনার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় রাফি গাড়িতে ঘটনার বর্ণনা দেন। তা মোবাইলে রেকর্ড করেন তার ভাইয়েরা।


রাফির চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলী বলেন, রাফি পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে তার সিটে প্রবেশ পত্র রাখেন। এসময় বোরকা পড়া এক ছাত্রী রাফিকে জানায়, ‘রাফির বান্ধবী নিশাতকে পাশের সাইক্লোন সেন্টারে মারধর করা হচ্ছে। এ কথা শুনে রাফি সেখানে যাবার পর চারজন বোরকা পড়া মানুষ তার হাত ধরে ফেলে। তাদের পরনে হাতমোজা এবং চোখে কালো চশমা ছিল। তারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাফির যৌন হয়রানির মামলা তুলে নিতে বলে। হুজুরের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলতে বলে। রাফি এ কথার বিরোধিতা করার সঙ্গে সঙ্গে তারা গ্লাসে থাকা তরল পদার্থ রাফির গায়ে ছুড়ে মারে। এরপর আগুন ধরিয়ে দেয়। রাফির শরীরে আগুন ধরে গেলে সে সিঁড়ি বেয়ে দৌঁড়ে চিৎকার করে নিচে নেমে আসে। এ সময় শিক্ষার্থী, কেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মীরা পানি ও মাটি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।


ঘটনার পর পুলিশ রাফির বান্ধবী নিশাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাকে কেউ মারধর করেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। কারা রাফিকে খবর দিয়েছিল, তাও তিনি জানাতে পারেননি।


রাফির সঙ্গে তার মা শিরিন আক্তার, বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ও মেজো ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রয়েছেন। তার মা মেয়ের জন্য হাসপাতালের মেঝেতে বসে বিলাপ করলে স্বজনরা তাকে সান্তনা দেয়। আগুনে রাফির শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল।


রাফির ভাইয়ের দাবি, ২৭ মার্চের ঘটনার জের ধরে সোনাগাজীর একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার লোকজন দিয়ে আজকের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ওদিন ওই অধ্যক্ষ মাদ্রাসার নিজ কক্ষে তার বোনকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। রাজি হলে আলিম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগে দেয়া হবে বলে অধ্যক্ষ উল্লেখ করেন। এ ঘটনায় মামলা হওয়ায় অধ্যক্ষ এখন কারাগারে আছেন।


ঘটনার পর ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকে এনামুল করিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল পারভেজ, সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইকুল আহমদ ভুঁইয়া মাদ্রাসায় পৌঁছে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com