শিরোনাম
স্ত্রীর পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত পলান সরকার
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০১৯, ১৮:৩০
স্ত্রীর পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত পলান সরকার
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

স্ত্রীর কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদক প্রাপ্ত ‘বইওয়ালা’ পলান সরকার।


শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার হারুনুর রশিদ শাহ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পলান সরকারের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ স্কুলের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন পলান সরকার। জানাজার ইমামতি করেন উপজেলার বাউসা পূর্বপাড়া জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ আবুল বাশার। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।


জানাজায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের, রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, সরের হাট এতিমখানার পরিচালক শামসুদ্দিন সরকার, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদ্য নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাবলু, বাঘা পৌরসভার মেয়র আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক মেয়র আক্কাস আলী, বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম। এছাড়াও জানাজায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।


গ্রামে গ্রামে ঘুরে ছোট-বড় সবার দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। সেই পলান সরকার আর কখনো বই বিলি করবেন না। সামাজিকভাবে অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’।


পলান সরকার রাজশাহী জেলার ২০টি গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। আগ্রহের কারণে ২০০৭ সালে সরকারিভাবে তার বাড়ির আঙিনায় একটি পাঠাগার করে দেয়া হয়।


নিজের টাকায় বই কিনে পলান সরকার পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন তিনি। মাইলের পর মাইল হেঁটে একেকদিন একেক গ্রামে যেতেন পলান সরকার। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন তিনি। এলাকাবাসীর কাছে পলান সরকার পরিচিত ‘বইওয়ালা দুলাভাই’ হিসেবেও।


১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোরের বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পলান সরকার। তার আসল নাম হারেজ উদ্দিন। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তার বাবা মারা যান। আর্থিক সংকটে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাকে। স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতিও ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত পলান সরকার।


তিনি ছিলেন বই পাগল মানুষ। ডায়াবেটিস ধরা পড়ায় হেঁটে হেঁটেই পলান সরকার বই বিলি করতেন। এক টানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এ কাজ করেছেন তিনি।


২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে সারাবিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর আগে তাকে নিয়ে আসা হয় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে। এছাড়া পলান সরকারকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটকও তৈরি হয়েছে।


শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান পলান সরকার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।


পলান সরকার বার্ধক্যজনিত রোগে শয্যাশায়ী ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি ছয় ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর পলান সরকারের স্ত্রী রাহেলা বেগম (৮৫) মারা যান।


বিবার্তা/শান্ত/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com