শিরোনাম
আজ ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:০২
আজ ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে চুয়াডাঙ্গা শত্রুমুক্ত হয়। বাঙ্গালীর ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ একটি গৌরবময় অধ্যায়। একাত্তরের চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী বিশেষ অবদান সৃষ্টি করেছে। চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা ছিলো নেতৃস্থানীয় আর অবদান ছিলো অপরিসীম। কিন্তু সেই গৌরবগাঁথা ধরে রাখার কোন জোরালো তাগিদ নেই। ইতিহাসই একটা জাতির পরিচয় বিবেকের অনুপ্রেরণা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চুয়াডাঙ্গার শ্রীমন্ত টাউন হল ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গনের প্রধান কার্যালয়।


চুয়াডাঙ্গা শত্রুমুক্ত হওয়ার পর মোস্তফা আনোয়ারকে মহকুমা প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে এখানে বেসামরিক প্রশাসন চালু করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৪৪ বছর। অথচ, মুক্তিযুদ্ধের বহুল আলোচিত চুয়াডাঙ্গায় কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। ১৯৯৪ সালে শহীদ হাসান চত্বরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও তা অবৈধ স্থাপনা হিসেবে ২০০১ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়।


পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা মুক্ত দিবসের কালের সাক্ষী মাথাভাঙ্গা ব্রিজ ঘেঁষে একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা যে অস্থায়ী প্রথম রাজধানী ঘোষণা করা হয়েছিলো সেখানেই নেই কোনো স্মৃতিসৌধ। তবে মুক্তিযুদ্ধের চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম সংগঠক ও বর্তমান জাতীয় সংসদের হুইপ, চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন তার সাথে যুদ্ধে ৮জন শহীদের স্মরণে ৮ কবরের পাশাপাশি গড়ে তুলেছে আট শহীদ স্মৃতি কমপ্লেক্স।


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের টুআইসি কমান্ডার এমএ হান্নান বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে অংশ নেই চুয়াডাঙ্গা জেলার বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে আমিও একজন কষ্ট হয় একটাই সেনাবাহিনীর এক প্রধান বলেন, ৭মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলেছেন। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন তিনি জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছিলো। এটাই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান।


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মুজাহিদ ও আনসার বাহিনীর অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর চুয়াডাঙ্গায় সর্বপ্রথম ২০৪ জন মুজাহিদ ও আনসারকে একত্রিত করা হয়। জেলা পরিষদের ডাকবাংলাই মেজর ওসমানগনি ও তদানীন্তন এমএলএ ডা. আসহাবুল হক হ্যাবার নির্দেশক্রমে ৫ এপ্রিল রাত ১২টার সময় আমিনুল ইসলাম মুজাহিদ ও আনসার বাহিনীর অধিনায়ক হয়ে কুষ্টিয়া ভেড়ামারার পাকশী হার্ডিংব্রজের অভিমুখে রওনা হয় এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম পাক সৈন্যের সমানে অবরোধের দেওয়াল গড়ে তোলে।


পাকবাহিনী যশোর থেকে ট্রেন যোগে এসে চুয়াডাঙ্গা প্রবেশ করে। আলমডাঙ্গা রেললানের পাশে পাকিস্তানী হানাদাররা ডাউন ট্রেন থামিয়ে স্বাধীনতাকামী মানুষের ট্রেন থেকে নামিয়ে পাশের মাছ বাজারে হত্যা করে সেখানে বৈধ্যভুমিতে পরিণত করে।


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ভুলু শেখ বলেন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী চুয়াডাঙ্গার মুক্তিবাহিনী ও নারীদের নির্যাতন করত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টারে। আর ঐ কোয়ার্টার থেকে ৭ ডিসেম্বরের পরে পাওয়া যায় নারী পুরুষের আজো গলিত লাশ। এখনো রাতে মুক্তিবাহিনী ও নারীদের আত্ম চিৎকার কানে ভেসে আসে। ৭ ডিসেম্বরের পরে হাসপাতালের পরিত্যাক্ত ড্রেন থেকে পাওয়া যায় মর্টার লান্সারসহ ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ।


১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মুজাহিদ হাবিলদার কালু শেখ ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গ্রুপ কমান্ডার বলেন, আতিয়ার রহমান ৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা ২৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে চুয়াডাঙ্গার দিকে আসে। অপরদিকে দর্শনার দিক থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী সাথে যোগদিয়ে চুয়াডাঙ্গার মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গার দিকে অগ্রসর হয়। ওইদিন এ খবর পেয়ে সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীর ব্রিজটি পাকবাহিনী বোমা বিস্ফোরণ করে উড়িয়ে দেয়, যাতে মুক্তিবাহিনী তাদের অনুসরণ করতে না পারে। কিন্তু দর্শনার দিক থেকে আসা মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গাই আসলে ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে পাকবাহিনী চুয়াডাঙ্গা শহর ও আলমডাঙ্গা ছেড়ে কুষ্টিয়ার দিকে চলে গেলে চুয়াডাঙ্গা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়।


চুয়াডাঙ্গার সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন বলেন, বর্তমান জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তার সহযোদ্ধা শহীদ রবিউল ইসলাম ও শহীদ তোফাজ্জেলসহ যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছে তাদের এখন পর্যন্ত কবর সনাক্ত করা হয়নি তাদের কবর সনাক্ত করা প্রয়োজন, একই সাথে অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কারার আশা ব্যক্ত করেন।


বিবার্তা/সালেকিন/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com