শিরোনাম
নবগঙ্গা নদী দখল করে চলছে ধান চাষ!
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৩২
নবগঙ্গা নদী দখল করে চলছে ধান চাষ!
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নড়াইলের এক সময়ের স্রোতস্বিনী নবগঙ্গা নদী এখন ধানক্ষেত। নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। চলছে নামে-বেনামে চর দখল, ধান চাষ ও তৈরি হচ্ছে বসতবাড়ি। পলিতে নদী ভরাটে ভূমিহীন সেজে তা দখল দিচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে মামলা-মোকদ্দমা। নাব্যতা সংকটের বন্ধ নৌ যোগাযোগ।


একসময় বর্ষা এলে নবগঙ্গা নদীতে নৌকা বাইচ উপভোগ কতেন হাজারো মানুষ। নদীটি জেলার অন্যতম প্রধান নদী ও তখনকার যাতায়াতের মাধ্যম ছিলো। তাই এর তীরে গড়ে উঠেছিলো জেলার সবচে বড় বাণিজ্যিক বাজার নড়াইলের লোহাগড়া, লক্ষ্মীপাশা ও মহাজন বাজার। তখন কোলকাতা থেকে স্টিমার নিয়ে বনিকেরা খুলনা হয়ে নড়াইলে আসতেন বাণিজ্য করতে। সেই সবই এখন কেবলই স্মৃতি।


আশির দশকে অসংখ্য লঞ্চ এবং পাল তোলা নৌকায় গুন টেনে পণ্য আনয়ন করতেন ব্যবসায়ীরা। নাব্যতা সংকট ও কালের আবর্তে নবগঙ্গা নদী তার রূপ যৌবন সবই হারিয়েছে। নেই সেই আগ্রাসী রূপ। এর জন্য যতটা প্রকৃতি দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী মানুষ। নবগঙ্গার কুন্দশী থেকে মহাজন পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার পায়ে চলা সরু পথে পরিণত হয়েছে। এমনকি নদীতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য শিকারিরা মাছ শিকার করছে প্রতিনিয়ত।


সম্প্রতি-কাল শীতে নবগঙ্গা নদীর নাব্যতা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় লোহাগড়া-নড়াইল হয়ে খুলনায় নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পণ্য পরিবহনে চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ব্যবসা বাণিজ্যে নেমেছে ধস। নাব্যতা ফিরাতে ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২৫ কোটি টাকায় মল্লিকপুর থেকে মহাজন পর্যন্ত খনন করা হলেও তা তেমন কোনো কাজে আসেনি। প্রতি বর্ষা মৌসুমে পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়।


পৌর মেয়র আশরাফুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম রেজা খান জানান, নদী শাসন আইন নবগঙ্গার জন্য কার্যকর হয় না। প্রকাশ্যে চলছে নবগঙ্গা নদী দখলের প্রতিযোগিতা।


কুন্দশী গ্রামের মৎস্যজীবী গণেশ ও সনজয় বিশ্বাস, লক্ষ্মীপাশা গ্রামের জিতেন, সনজিৎ ও নেপাল বিশ্বাস জানান, এই নদীই আমাদের রুটি-রুজির উৎস। জেলেরা মাছ শিকার করে জিবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় এখন আর জেলেরা নদীতে আসে না। অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে।


নড়াইলের ডিসি আনজুমান আরা বেগম জানান, ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে এক কালের খরস্রোতা নবগঙ্গা শুকিয়ে এখন খালে পরিণত হয়েছে। আর জেগে উঠা চরগুলো ধান চাষের অন্যতম আঁধারে পরিণত হয়েছে। আমাদের কিছু কাজ শুরু হলে সরকার তৎপরতা বাড়ায়। আমাদের তৎপরতা থেমে গেলে সরকারি উদ্যোগও বন্ধ হয়ে যায়। নবগঙ্গা নদী দখল আর দূষণমুক্ত এবং ড্রেজিং করে এই নদীর প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি করেন তিনি।


ডিসি আরো জানান, নদী কমিশনের নীতি ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। সম্প্রতি নড়াইলের চিত্রনদীর অপদখলমুক্ত করতে অভিযান শুরু হয়েছে। জেলার সকল নদীরক্ষায় অপদখলমুক্ত করা হবে।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com