শিরোনাম
'রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধে এনজিওগুলোই দায়ী'
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ২০:২৩
'রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধে এনজিওগুলোই দায়ী'
১৫ নভেম্বরের ছবি
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধে এনজিওগুলোকে দায়ী করেছেন উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রত্যাবাসন না হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা। একই সাথে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ার কাজে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের শাস্তির দাবিও তাদের।


স্থানীয়দের ধারণা, মিয়ানমার প্রত্যবাসনের দিনক্ষণ ঠিক করে প্রত্যাবাসন না হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গারা এখন সুযোগ নিবে। বহির্বিশ্বকে উল্টো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বুঝিয়ে সমালোচনা করবে। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গারা আর ফিরে না যাওয়ারও যথেষ্ট সম্ভবনা আছে।


উখিয়া উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারেনি, এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আমি দেখেছি, সেদিন রোহিঙ্গারা যেভাবে স্লোগান দিচ্ছিল এবং আমাদের দেশের অনেক সরকারি কর্মকর্তাদেরও নাজেহাল করছিল। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এতে তাদের ভেতরে অপরাধবোধ জন্ম নেবে, এটা আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক হবে।


উখিয়ার ডিগলিয়াপালংয়ের মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, সীমিত সংখ্যক হলেও যে মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসন শুরু করেছে এটাই আমাদের জন্য ভালো খবর ছিল। পরে যে অবস্থা দেখলাম, এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। রোহিঙ্গাদের জন্য গাড়িবহর ছিল, খাবার-দাবার ছিল, বিপুল সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনী ছিল। তারপরও কেন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো গেল না? এরা কী আমাদের দেশের আইন শৃংখলার বাইরে?


তিনি বলেন, আরো একটি দেখার বিষয় আছে। রোহিঙ্গাদের হাতে যে সমস্ত প্লেকার্ড ছিল তা ইংরেজিতে লেখা। আর তাদের মুখে যে স্লোগান দিচ্ছিল তা অবশ্যই কারো না কারো শিখিয়ে দেওয়া। কারণ রোহিঙ্গারা ইংরেজি লিখতে পারে না, পারলেও প্রত্যাবাসন বিরোধী এত সুন্দর করে লিখতে পারার কথা না। এটা নিশ্চয়ই কোনো এনজিওর লোকজন তাদের লিখে দিয়েছে এবং শিখিয়ে দিয়েছে। তাই স্থানীয় জনগণ হিসাবে আমরা দাবি করছি, আগে সে সমস্ত এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।


টেকনাফ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল হোসেন রাজু বলেন, এতদিন আমরা অপেক্ষা করে ছিলাম- মিয়ানমান কখন প্রত্যবাসনের জন্য রাজি হচ্ছে। কিন্তু যখন তারা রাজি হলো আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারলাম না। আগে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ সব আর্ন্তজাতিক সংস্থার কাছে গিয়ে বলতো রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে। কিন্তু এখন মিয়ানমান সব জায়গায় গলা উঁচু করে বলবে- আমরা ফেরত আনতে রাজি ছিলাম কিন্তু বাংলাদেশ ফেরত দিতে পারেনি। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।


তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যে সমস্ত দাবির কথা বলে ফেরত যায়নি আদৌ কি সেই সব দাবি পূরণ করা সম্ভব? এসব দাবি একশ বছরেও পূরণ হবে না। সুতরাং রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়েছে, সেটা অনেকটা নিশ্চিত। একই সাথে যে সমস্ত এনজিও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।



টেকনাফের সাবেক কমিশনার আবদুল কুদ্দুস ও শিক্ষক শাহজাহান বলেন, আমরা ব্যক্তিগতভাবে খুবই ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। কারণ রোহিঙ্গারা যদি আন্দোলন করে ফেরত যাওয়া বন্ধ করতে পারে তাহলে তাদের ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে নেওয়া খুব কঠিন হবে। আর রোহিঙ্গার কারণে যাদের লাভ হচ্ছে তারাই রোহিঙ্গাদের ফেরত না যেতে উৎসাহিত করছে বলে আমরা খবর পেয়েছি এর ফলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি তাদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকবে? নাকি আমরা ভিটামাটি ছেড়ে চলে যাব?


রামু কলেজের অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, যখন থেকে শুনেছি রোহিঙ্গা প্রত্যবাসন হচ্ছে তখন থেকে একটি ভালো লাগা কাজ করছিল। কিন্তু একটি সংশয়ও মনের মধ্যে ছিল- আদৌ প্রত্যাবাসন হবে কিনা? কারণ রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে যে নাগরিক সুবিধা পায়নি তার চেয়ে শতগুণ সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশে পাচ্ছে। তারা এখন ভাত কাপড়ের পাশাপাশি কথা বলা, এমনকি আন্দোলন করারও সুযোগ পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ফেরত না যাওয়াটা আমার মতে স্থানীয়দের জন্য একটি বড় অশনি সংকেত।


তিনি বলেন, সুযোগ পেলে রোহিঙ্গারা অন্যকিছুর জন্য আন্দোলন করতে পারে। আর ১২ লাখ রোহিঙ্গা যদি আন্দোলনে নামে তাহলে পরিস্থিতি কী হতে পারে সেটা সহজে অনুমেয়! তাই সময় থাকতে আমাদের সাবধান হতে হবে- যে কোনোভাবেই হোক রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে শক্ত উদ্যোগ নিতে হবে।



কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ বারী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনার ভেতরে যখন জাতিসংঘ বিবৃতি দিচ্ছে মিয়ানমার এখনো প্রস্তুত না তখনি আমি মনে করেছিলাম প্রত্যাবাসন বোধ হয় বাধাগ্রস্থ হবে। কারণ আর্ন্তজাতিক মহল রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক ধরনের রাজনীতি করছে। তবে কম হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হওয়াটা খুব জরুরি ছিল। কারণ একটা প্রক্রিয়া শুরু হলে সেটা ধারাবাহিক থাকতো। এখন পুরো প্রক্রিয়াটাই বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া মিয়ানমার একটি বড় সুযোগ পেল আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে কথা বলার জন্য। এতদিন তারা কোনো কথা বলতে না পারলেও এখন বলবে আমরা নিতে চাইলেও বাংলাদেশ দিতে পারছে না। এতে আগামী দিনে স্থানীয় জনগণের জন্য ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে।


উখিয়া প্রত্যবাসন সংগ্রাম ও রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গারা চলে গেলে কতিপয় এনজিওদের চাকরি থাকবে না। মোটা অংকের বেতন গুনতে পারবে না। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কতিপয় এনজিও উস্কানি দিচ্ছে।


এদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি। রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরতে চাইলেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।


বিবার্তা/মানিক/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com