শিরোনাম
সিডরের ১১ বছর, এখনো শোনা যায় কান্নার আওয়াজ
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:৫৮
সিডরের ১১ বছর, এখনো শোনা যায় কান্নার আওয়াজ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ১৫ নভেম্বর। আজ থেকে ১১ বছর আগে ২০০৭ সালের এইদিন রাতে দেশের উপকূলীয় ১১টি জেলায় আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর। সেই সিডরের তাণ্ডবে অনেক হারিয়েছেন তাদের কাছের মানুষ। আজো স্বজনদের প্রতীক্ষায় দিনরাত পথ চেয়ে থাকেন সাতক্ষীরার জেলেদের পরিবার। তাদের চোখের জল আজো যে আর শুকায় না।


সিডরের নির্মম বলি সাতক্ষীরা শহরের কুখরালির জেলে পাড়ার কেনা বৈদ্যের স্ত্রী পদ্মা রানী আর তার দুই সন্তান সাগর ও তুফান এখনো অপেক্ষায় থাকে কখন ফিরবে মাছ ধরতে যাওয়া তাদের আপন মানুষটি। ২০০৭ সালের সেই ভয়াল থাবার পর থেকে এভাবেই কাটছে তাদের বছরের পর বছর।


একই সাথে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসা সেই সব জেলেরা আজো সে কথা মনে করে শিউরে ওঠেন। সাগর জলে তিনদিন ভাসমান থেকে জীবন রক্ষার স্মৃতি রোমন্থনে।


মহাজনের কাছ থেকে নেয়া দাদনে আটকা পড়া কুখরালির রতন বৈদ্য ও তার ছেলে কেনা বৈদ্য সাগরে ভিন্ন ভিন্ন ট্রলারে মাছ ধরতে যায়। সিডরের আঘাতে রতন বৈদ্য প্রাণে বেঁচে গেলেও চিরদিনের মতো হারিয়ে যায় তার ছেলে কেনা বৈদ্য। রতন বৈদ্য ও তার স্ত্রী শান্তি রানী আজো ছেলের শোক বয়ে বেড়াচ্ছেন। কেনার স্ত্রী পদ্মা তার দুই ছেলেকে বুকে নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় দিন কাটায়। এখনো তাদের পুরো পরিবার তার পথ চেয়ে থাকে।


এদিকে সাগরে ভাসমান ড্রামের সাথে নিজেকে রশি দিয়ে বেধে সাত ঘন্টারও বেশি সময় ধরে নিশ্চিত মৃত্যুর সাথে লড়াই করে প্রাণে রক্ষা পাওয়া তালার মালোপাড়ার মিন্টু ও উত্তম সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে জানান, সিডরের দাপটে তার বাবা ও কাকা গৌর হালদার ও অজিত হালদারের মৃত্যুর দৃশ্য তারা দেখেছেন।


শ্যামনগরের পদ্মপুকুরের খোলপেটুয়া নদীতে শিক্ষক বাবা ইব্রাহীমকে বাঁচাতে গিয়ে সলিল সমাধি হয় ছেলে আইউব আলির। সাগর জলে মাছ ধরা ছাড়াও বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, দুবলার চর, আলোরকোলসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত সাতক্ষীরার ২৩টি প্রাণ সিডরে সাগরের নীল জল নিভিয়ে দিয়েছিল।


সাতক্ষীরায় সিডরের আঘাত জোরালো না হলেও জেলার বাইরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তালার অজিত, গৌর, গোবিন্দ, কুড়িকাহনিয়া, শ্রীপুরের আমিরুল, লাভলু, বড়দলের সন্যাসী, জয়নগরের লুৎফর রহমান, রসিদ, লালু হালদার, সাঈদুর রহমান, আবদুল, নজিবুল, ফিরোজা, আনারুল, আয়েশা, দাঁতনেখালির আফসার, বড়কুপোটের শামীম হোসেন ও খোকন রাজবংশীসহ অনেকেরই জীবন প্রদীপ নিভে যায়।


এদের কারো দেহ পাওয়া গেছে। কেউ বা নিখোঁজ। তবু স্বজনরা ভাবেন তারা বেঁচে আছেন। তাদের অপেক্ষায় কাটে দিন মাস বছর। সেই ভয়াল স্মৃতি নিয়ে এবারো ১৫ নভেম্বর পার হলো। স্বজনহারা পরিবারগুলির চোখের জল আর শেষ হয় না। তাদের পথ চেয়ে থাকারও যেনো শেষ নেই।


বিবার্তা/আব্দুর রহমান/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com