শিরোনাম
অবশেষে ঘর পেলেন পলিথিনের ঝুঁপড়িতে থাকা কুলসুম
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৫০
অবশেষে ঘর পেলেন পলিথিনের ঝুঁপড়িতে থাকা কুলসুম
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘মানুষ মানুষের জন্য’ কথাটি আবারো প্রমাণ হল। অবিশ্বাস প্রতারণা আর নানামুখী অপরাধের বেড়াজালে মানুষ যখন আবদ্ধ তখনো কিছু মানুষ আত্মার প্রশান্তিতে ভালো কিছু করার চেষ্টা করে যান। যাদের সহযোগিতা আর ভালবাসায় অবহেলিত বঞ্চিত কিছু মানুষ এখনো ভালভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নটুকু দেখতে পায়।


এমনি এক প্রমাণ মিলেছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের কড়াইল-স্বল্পবড়টিয়া গ্রামের ৬২ বছর বয়সের বৃদ্ধা কুলসুমের জীবনে। ঘরহারা কুলসুমের ঠিকানা যখন ছিল খোলা আকাশের নিচে একটি পলিথিনের তাবুতে, তখনই কিছু মানুষ বন্ধুর মতো হয়ে তার পাশে দাঁড়ান।


এক সরকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে ফেসবুকে কুলসুমের ছবি পোস্ট হলে অসহায় কুলসুমের মানবেতর জীবন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা। এরপর অনেকেই তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।


অবশেষে সবার সহযোগিতায় দোচালা টিনের একটি ঘর নির্মাণ করতে পেরেছেন কুলসুম। পলিথিনের ঝুঁপড়ি ছেড়ে এখন কুলসুম ঠাঁই নিয়েছে টিনের নতুন ঘরটিতে। আর অনেকেই এ ঘরটিকে ‘মানবতার ঘর’ বলেছেন।



গত বছর অসুস্থ হয়ে অর্থের অভাবে বিনে চিকিৎসায় মারা যান তার স্বামী। অভাবের তাড়নায় ঘরটাও বিক্রি করে দিতে হয় তাকে। সব হারিয়ে ভিটে বাড়িতে পলিথিনের তাঁবুতে আশ্রয় নেন তিনি। অর্ধেকটা শোবার জন্য চৌকি রাখা, পাশের অর্ধেকেটাতে ছিল গরু রাখার জায়গা। বলা চলে সংযুক্ত গোয়াল ঘরে ছিলেন তারা। রোদের তাপ, শীতের তীব্রতা আর বৃষ্টির ফোঁটা সহজেই ভেতরে প্রবেশ করতো। নিরাপত্তা ছিল না মোটেও। এমন একটি ঝুঁপড়িতে গত এক মাস ধরে ছিলেন কুলসুম নামের এই বৃদ্ধাটি।


পাশের আরেকটা চৌকিতে থাকতেন তার ৩৫ বছরের ছেলে মোশারফ, ১০ বছর বয়সি নাতি আসলাম। শিশু আর নারীসহ তিনজনের থাকার একমাত্র জায়গা ছিল এই পলিথিনের ঝুঁপড়িটি।


এরপর দেউলি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মোশারফ বাপ্পির নজড়ে আসে কুলসুমের পলিথিনের ঝুঁপড়িটি। তিনি ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে সবাইকে কুলসুমের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান। সরকারের বিনা মুল্যের ঘর না পাওয়ায় অনেকেই প্রশাসনের সমালোচনাও শুরু করেন।


তবে যাই হোক ফেসবুকে পোস্ট হওয়া ছবিগুলো নজড়ে আসে সাংবাদিকদের। তারা কুলসুমের মানবেতর জীবন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে স্থানীয় প্রশাসন তড়িৎ গতিতে এগিয়ে আসেন কুলসুমের সহযোগিতায়।


এরপর দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদিরা আক্তার তাকে ৩০ হাজার টাকা দেন টিনের একটি ঘর নির্মাণের জন্য। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস.এম ফেরদৌস আহমেদ কুলসুমের বাড়ি পরিদর্শন করে কুলসুমের নাতি আসলামকে স্কুল ড্রেস কেনার টাকা দেন এবং উপবৃত্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা দেন।



অন্যদিকে দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম সাচ্চু পরিবারটিকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। আটিয়া ইউনিয়র পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মল্লিক মিয়া তিন বান টিন কিনে দেন। দেউলি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক এবং ফেসবুকে কুলসুমের ছবি পোস্টকারি বাপ্পী কুলসুমের ঘর তৈরি করতে কাঠের যোগান দেন এবং ঘর নির্মাণে সার্বিক তদারকি করেন।


এছাড়াও আরো অনেকেই কুলসুমের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। আর এভাবেই তৈরি হল কুলসুমের দোচালা টিনের ঘর। জয় হয় মানবতার, তৈরি হয় মানবতার ঘর। সবার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় এবং তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কুলসুম।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com