নাটোর গুরুদাসপুরের তুলশীগঙ্গা নদীতে বাঁশের বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা। ফলে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। সময়মতো পানি নিস্কাশন না হওয়ায় চলতি আমন ধান কাটতে পাড়ছেন না কৃষকেরা। এতে হুমকিতে পড়েছে অন্তত ১৫ বিলের রবিশস্য আবাদ।
ভুক্তভোগী কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা হয়ে সোনবাজু, চাকল বিল, মাধ্যম কৈগাড়ী, বড়বিল, খলিশাগাড়ী, সমাজগাড়ী, জোলীগাড়ী, কাঁকড়াগাড়ীসহ নাজিরপুর-ধারাবারিষা ও চাপিলা ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি বিলের পানি ওই তুলশীগঙ্গা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিনু সরকারের ধরের স্লুইসগেট হয়ে বেরিয়ে যায়। অথচ সিধুলী পশ্চিম পাড়া ব্রীজ সংলগ্ন এলাকার পূর্বপাশে তুলশীগঙ্গা নদীর এপার ওপারজুড়ে বাঁশের বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গুরুদাসপুরের ধারাবারিষা ইউনিয়নের সোনাবাজু চাকল বিল, টেংড়াগাড়ি বিল এবং তুলশীগঙ্গা নদীর পশ্চিম অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮০ একর জলাশয় রয়েছে। উন্মুক্ত ডাকের মাধ্যমে চলতি বছরের ১ মার্চ হতে এক বছর মেয়াদে ওই জলাশয় লিজ নেন সোনাবাজু গ্রামের লিয়াকত আলী ও লিটন সরদার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সিধুলী পশ্চিম পাড়া ব্রীজ সংলগ্ন পূর্বপাশে তুলশী গঙ্গা নদীতে বাঁশের উপকরণ (বেড়া) দিয়ে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ শিকার করা হচ্ছে।
সেখানে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সোনাবাজু গ্রামের হযরত আলীর ছেলে জাকারিয়া বলেন, নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে ডাকের মাধ্যমে এক বছরের জন্য ওই জলাশয় লিজ নিয়েছেন।
ওই জলাশায়ের লিজ গ্রহীতা লিটন সরদার বলেন, চাকল ও টেংড়াগাড়ি বিলের ৮০ একর জলাশয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে এক বছর মেয়াদে লিজ নিয়েছেন। তবে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ ধরা নিষেধ এ বিষয়টি আমার জানা নেই।
এদিকে কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গুরুদাসপুর উপজেলার ১৫টিরও বেশি বিলের পানি তুলশীগঙ্গা নদী দিয়ে নিস্কাশন হয়। প্রতিবছরই বর্ষা মওসুম শেষে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা লিজের অজুহাতে নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করেন। এতে পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি হয়। বাঁধ খুলে না দিলে এসব এলাকার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমির উঠতি আমন ধান কাটা এবং সংগ্রহ করা যাবে না। তাছাড়া রবিশস্য আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
এসব এলাকার কৃষক ওবায়দুল, মনিরুল, আব্দুল খালেক, জাহিদুল ইসলামসহ অন্তত ২০ জন কৃষক অভিযোগ করেন, তুলশীগঙ্গা নদীর মাধ্যমে ১৫টির বেশি বিলের পানি প্রবাহিত হয়। বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের কারণে এসব বিলের পানি নামতে পারছেন না। ফলে রবিশস্য ফসল চাষ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।
ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মাষ্টার বলেন, তার পরিষদ এলাকার তুলশীগঙ্গা নদীতে বাঁধ দেওয়ার ব্যাপারে কৃষকরা তার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। তিনিও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আবু সৈয়দ জানান, গুরুদাসপুরের চাকল বিল এবং টেংড়াগাড়ি বিলের ৮০ একর জলাশায় স্থানীয় মৎস্য চাষীদের কাছে মাছ চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। তবে তুলশী নদী লিজ দেয়া হয়নি। কোনো প্রভাবশালী যদি নদীতে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে মাছ শিকার করলে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, নতীতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা অবৈধ। কৃষকেদর দেওয়া অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। দ্রুত ওই বাঁধ অপসারণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবার্তা/দিলু/কামরুল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]