শিরোনাম
উপকূল রক্ষায় সবুজ বিপ্লব
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ১২:০৫
উপকূল রক্ষায় সবুজ বিপ্লব
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় অঞ্চল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সবুজ বিপ্লবের কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে তৃণমূল পর্যায়ের গ্রাম গঞ্জের মানুষ যেন বৃক্ষ রোপণ অভিযানে নেমেছে। প্রতিযোগিতা মূলকভাবে প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনাসহ পরিত্যক্ত জমিতে ফলোদ ও বনজ গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে।


পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেশ কিছু বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উপকূলীয় এ এলাকার রাস্তার দু’পাশে গাছের চারা রোপণ শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ রোপণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরফলে এ বনায়ন উপকূল রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদরা।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার পৌর শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিক্রির ভ্রাম্যমাণ হাট বসে। ওই হাট থেকে হাজার হাজার চারা গাছ ক্রয় করে নিয়ে যায় এলাকার মানুষ। চারা গাছের মধ্যে রয়েছে চাম্বল, রেইনট্রি, মেহগনি, আকাশমণি, লেবু, আম, কাঁঠাল, মালটা, পেয়ারা, অমড়া, কামরাঙ্গা ইত্যাদি। এছাড়া ক্রেতারা লাউ, বোম্বাই মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চারা ক্রয় করছেন।


এসব গাছের চারা বিক্রি করছে গড়ে ১০ থেকে ৬০ টাকায়। আবার ফলদ গাছের চারা একটু চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব চারা গাছ জেলার স্বারুপকাঠিসহ বিভিন্ন নার্সারি থেকে পাইকারিভাবে ক্রয় করে ট্রলার যোগে এনে এই হাটে বিক্রি করা হয়। প্রতি হাটে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার গাছের চারা বিক্রি হয় বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।


এদিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উপজেলার বালিয়তলী, মিঠাগঞ্জ, ডালবুগঞ্জ ও মহিপুর ইউনিয়নের ছয় কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে চার হাজার বনজ বৃক্ষ রোপণ করেছে। ওইসব গাছের চারা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে স্থানীয় ওয়ার্ড দুর্যোগ প্রমোশন কমিটি।


চারা বিক্রেতা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি প্রায় দেড় লক্ষাধিক গাছের চারা বিক্রি করেছে। অপর বিক্রেতা জাহিদ সেও এক থেকে দেড় লাখ ফলদ ও বনজ গাছের চারা বিক্রি করেছেন। তারা জানান, লাভজনক হওয়ায় সবাই চারা গাছ রোপণের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। তাছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের চারা গাছ লাগানোর আগ্রহও বেড়ে গেছে।


ধূলাসার ইউনিয়নের চাপলী গ্রামের মো. লুৎফুল হাসান রানা জানান, সামান্য ঝড় হলেই ঘর বাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। ঝড়ো বাতাস থেকে রক্ষা পেতে গ্রামবাসী এখন বাড়ির চারপাশে দ্রুত বর্ধনশীল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করেছে। তিনি নিজেও বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক চারা গাছ রোপণ করেছেন বলে জানান।


ওয়ার্ল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ উপজেলা সমন্বয়কারী জেমস্ রাজিব বিশ্বাস জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় টিয়ার ফান্ড, সিডর ফান্ড ও ইন্টারএক্টের অর্থায়নে ইতোমধ্যে ওইসব ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।



কলাপাড়া বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম জানান, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এই উপকূলীয় এলাকায় ৫৩ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেছেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লক্ষ শহীদের স্মরণে যে জাতীয় বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালিত হয়েছে সে কর্মসূচীতে কলাপাড়া বন বিভাগ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২২ হাজার ৫’শ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করে এ কর্মসূচী সফল করেছে।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, সরকারি ভাবে এ বছর উপজেলায় বিভিন্ন প্রজাতির ফলোদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। এলাকার লোকজন এভাবে যদি চারা গাছ রোপণ করে তাহলে এক সময় উপকূলীয় এ জনপদে সবুজ বেষ্টনী তৈরিসহ পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা পাবে।


বিবার্তা/উত্তম/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com