প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে আরো আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন, যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারি, বিমানবাহিনীর জন্য আরো যে পরিকল্পনা আছে, সেগুলো করব। ফোর্সেস গোল ২০৩০ অনুযায়ী বিমানবাহিনীকে সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

যশোরে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটিতে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

স্বাধীনতার পর থেকে বিমান বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিমানবাহিনী আজ এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনা হয়েছে, যেটা চতুর্থ প্রজন্মের। দক্ষ পাইলট তৈরি করতে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের বিমানবাহিনী জঙ্গি দমনেও বিশেষ দক্ষ হলি আর্টিজানের ঘটনার সময় সিলেট থেকে বিশেষ বাহিনী উড়িয়ে এনে তারা সহযোগিতা করেছে। পার্বত্য দুর্গম এলাকা থেকে শুরু করে সব দুর্যোগে বিমানবাহিনী এগিয়ে আসে। নেপালে প্লেন দুর্ঘটনার সময়ও বিমানবাহিনী সেখানে থেকে তাদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হলো- সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। কিন্তু যদি কখনো আঘাত আসে, তাহলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার মতো প্রস্তুতি আমাদের রাখতে হবে। এজন্যই প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত- এই প্রত্যয় থেকে বিমানবাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এজন্য বিমান সেনাদের প্রশিক্ষণ কোর্স যুগোপযোগী করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর পর বিমান বাহিনীর জন্য এবার এমন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হলো। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি ভবিষ্যতে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।

উপস্থিত বিমান বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সততা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নেবেন।

বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য উন্মোচন করেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা। ১২টি ভবন ও অবকাঠামোর সমন্বয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে একসঙ্গে ৬০০ ক্যাডেটের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে এখানে সুপারসনিক উইন্ডটানেল, অ্যারোডিনামিক্স ল্যাব, গ্যাস টারবাইন এবং পিস্টন ইঞ্জিন সমৃদ্ধ অ্যারোইঞ্জিন ল্যাব, সার্কিট ল্যাব, পাঠাগার, কম্পিউটার ও ল্যাংগুয়েজ ল্যাব রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হল। এই প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল বাংলাদেশের যথার্থতা প্রমাণ করে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ একাডেমি হবে, যেখানে সারা পৃথিবী থেকে প্রশিক্ষণার্থী আসবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি আজ এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা উন্নত দেশের যে কোনো বিমানবাহিনী একাডেমির সমকক্ষ।

তিনি আরো বলেন, বিমানসেনা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট দক্ষ ও চৌকস জনশক্তির যোগান দিতে সক্ষম হবে। এ অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত ও তত্ত্বীয় জ্ঞাননির্ভর বিমানসেনা গড়ে তুলবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবাহিনীর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বরিশাল ও সিলেটে বিমানঘাঁটি স্থাপনসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম সংযোজন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলমান আছে।

বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধন উপলক্ষে বিমানবাহিনী একাডেমিতে কুচকাওয়াজ হয় এবং প্রধানমন্ত্রী সেখানে সালাম গ্রহণ করেন। তিনি বিমান বাহিনীর ফ্লাইপাস্ট এবং বৈমানিকদের বিভিন্ন উড্ডয়ন কৌশলও দেখেন। পরে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অংশ তাকে ঘুরিয়ে দেখানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী সকালে যশোরে বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছালে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ারচিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের অধিনায়ক এবং বিমানবাহিনী একাডেমির কমান্ড্যান্ট তাকে স্বাগত জানান।

যশোরে এ অনুষ্ঠান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হকের ১০৫ অ্যাডভান্সড জেট ট্রেনিং ইউনিটের কার্যক্রম উদ্বোধন এবং বিমান সেনা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, তিন বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য এবং বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিবার্তা/জাকিয়া