শিরোনাম
ধরলার ভাঙ্গনে শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:০৬
ধরলার ভাঙ্গনে শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সম্প্রীতি শুরু হয়েছে ধরলা নদীর ভাঙন। তীব্র ভাঙনে এরই মধ্যে সদর ও পাটগ্রাম উপজেলার মোট ছয়টি ইউনিয়নের শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি ও গাছপালা। হুমকির মধ্যে রয়েছে আরো শতাধিক পরিবার। বন্যা পরিস্থিতি কাটার সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নদী ভাঙন। গত এক সপ্তাহে জেলায় শতাধিক বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।


সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ী এবং পাটগ্রামের শ্রীরামপুর, জোংড়া, বুড়িমারী ইউনিয়নের ২২টি পয়েন্টে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে জোংড়া, কুলাঘাট ও মোগলহাটের অবস্থা উদ্বেগজনক। এ তিন ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে চলছে বাঁধ নির্মাণের কাজ।


তবে এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, বাঁধ নির্মাণের কাজ পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে না। ফলে ভাঙনের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। স্থায়ীভাবে নদী শাসন করতে না পারলে লালমনিরহাটের ধরলার তীরের মানুষ কৃষি অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। তারা জানান, এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে নদীশাসন এখন সময়ের দাবি।


ধরলার ভাঙনে বিলীন হয়েছে জোংড়া ও মোগলহাট ইউনিয়নের বেলিচা বেগম, আইনুদ্দিন, মোতালেব উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, শামসুল হক, গফুর মোল্লা, মাইফল নেছা, ফয়াজ উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন ও রেজিয়া বেগমের বসতবাড়িসহ সব সহায়-সম্বল। কথা হলে তারা বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা স্থায়ী সমাধান চাই। বাঁধ দিয়ে ধরলা নদী শাসন করতে পারলে আমাদের গ্রামের দৃশ্য বদলে যাবে। তখন নিজেরাই আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারব।


জোংড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ আলী ও মোগলহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যা হলেই ধরলা তীরবর্তী পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়ে। খুব কষ্ট হলেও আমাদের কিছু করার থাকে না। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে শুধু নদী শাসনই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ লক্ষ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যরাও চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।


কুলাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী মাষ্টার বলেন, ধরলার ভাঙনে শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। কয়েক হাজার একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এসব থেকে রেহাই পেতে দ্বিতীয় একটি বড় বাঁধ নির্মাণ করা গেলে হয়তো ফসলি জমির পাশাপাশি লোকজনের ঘরবাড়ি রক্ষা করা সম্ভব হবে। ধরলা পাড়ের এসব লোকজন প্রশাসনিক অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।



চেয়ারম্যান জানান, বন্যার পানি নেমে গেলেও অস্বাভাবিক ভাঙনের মুখে ইউনিয়নের প্রায় ৬০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৫টি পরিবারের বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন কার্যক্রম চলছে। তাদের সহায়তার জন্য শিগগিরই তালিকাটি জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে। এসব পরিবার সরকারি-বেসরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে সব সময় বঞ্চিত।


লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, কিছু এলাকায় ধরলা নদীশাসনের কাজ চলছে। তাছাড়া ভাঙন ঠেকাতে টেকসই ব্যবস্থার পাশপাশি কৌশলগত করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এবারের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পেলে তাদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।


এ বিষয়ে লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাটগ্রামের জোংড়া ইউনিয়নে ১০টি প্যাকেজে ২৪ কোটি টাকার কাজ চলছে। এ ইউনিয়নে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে ধরলা নদীর খননকাজও। এছাড়া সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে আটটি প্যাকেজে ৮ কোটি টাকার কাজ চলছে। পাউবো পরিকল্পনা করেই কাজ বাস্তবায়ন করছে। তবে নদীশাসনের জন্য একসঙ্গে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় না। অর্থ বরাদ্দ পেলে নদীশাসনের কাজ দ্রুত করা হবে।


বিবার্তা/জিন্না/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com