শিরোনাম
‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে’ উৎসব ঘিরে লামায় সাজ সাজ রব
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১৯
‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে’ উৎসব ঘিরে লামায় সাজ সাজ রব
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে পাহাড়ে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে:’ বা প্রবারণা পূর্ণিমা। ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে:’ মার্মা শব্দ, এর অর্থ উপবাসের সমাপ্তি। অন্য অধিবাসীরা একে ‘ওয়াহ’ বলে থাকেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষব্রত (উপবাস) থাকার পর ধর্মীয় গুরুদের সম্মানে এ বিশেষ উৎসবের আয়োজন করে।


এই উৎসবই হলো ‘ওয়াইগ্যোয়েই পোয়ে:’ উৎসব। মারমাদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বড়ুয়া, চাকমা, তঞ্চঙ্গারাও এ উৎসবে যোগ দেয়। তিনদিন ব্যাপী এ উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানের লামা উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলোতেও চলছে আনন্দের বন্যা ও সাজ সাজ রব। পাশাপাশি উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তরুণ তরুণীদের মাঝে ধুম পড়েছে কেনাকাটার।


এ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি বৌদ্ধ বিহার ও পাড়াগুলোতে আর্থিক অনুদানও প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান। পাশাপাশি নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থাও।


মঙ্গলবার সকালে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসবের প্রথম দিন। পরে ছোয়াইং দানের পর এদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে ফানুস উড়ানো। এই চীনা কাগজ দিয়ে বিভিন্ন রং, বর্ণ এবং সাইজের ফানুস তৈরি হয়। পরে সলতে দিয়ে তৈল সহকারে তা উড়ানো হয়। এ সময় সূত্রপাত ও কীর্তন হয়, যুবকেরা নৃত্য করেন। ফানুস উড়ানোর দিকটা ধর্মীয়। বৌদ্ধ ধর্মে ফানুস উড়ানো দেখাও পুণ্যের কাজ।


গৌতম বুদ্ধের চুলামণি চৈত্যকে বন্দনার জন্যই ফানুস উড়ানো হয়। ফানুস বাতি উড়ানোর প্রতিযোগিতা সকলকে আকৃষ্ট করে। বিশাল আকৃতির ফানুস বাতি আকাশে উড়ানোর দৃশ্য দেখার জন্য বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের লোক এমনকি বহু বিদেশি পর্যটকও ভিড় জমিয়ে থাকে।


উৎসবের দিনগুলোতে প্রতিদিন বিকাল থেকে ফানুস উড়ানো শুরু হয়। ফানুস উড়ানোর আগে রথে জ্বালানো হবে হাজার হাজার মোমবাতি। এ জন্য স্থানীয় ক্যাং ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। শিশু কিশোর ও তরুণ তরুণীরা নতুন পোশাক পরিধান করে এই দিনগুলো পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবে বন্ধুদের সঙ্গে।


উৎসবের দ্বিতীয় দিন বুধবার সকাল থেকে বিহার ভান্তের মাঝে ছোয়াইং দানসহ ধর্ম দেশনাসহ দায়ক দায়িকা, তরুণ তরুণীরা সোমবার সন্ধ্যায় মাতামুহুরী নদীতে হাজার হাজার বাতি ভাসিয়ে প্রদীপ পূজা করবেন। এছাড়া বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত উপাসক উপাসিকাকে তরুণ তরুণীরা ঢোল বাজনা বাজিয়ে গোসলের আয়োজন করবে।


উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের কেয়াংগুলোতে পৃথকভাবে এ উৎসব পালন করা হবে। বিশেষ করে লামা উপজেলার কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও গজালিয়া, রুপসীপাড়া এবং পৌর এলাকার সাবেক বিলছড়ি, ছাগল খাইয়া বৌদ্ধ বিহারে জাঁকজমকভাবে এ উৎসব পালন হবে বলে জানা গেছে। বিহারে বিহারে ভান্তেগণ দায়ক দায়িকার উদ্দেশ্যে ধর্ম দেশনা ও পঞ্চশীলের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে বৃহস্পতিবার।


লামা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে:’ উদযাপন কমিটির সদস্য মংচাই মার্মা, বাবু মং মার্মা ও ছাগল খাইয়া মার্মা পাড়ার মংসুইহ্লা এ প্রতিবেদককে জানায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও যথাযথ মর্যাদায় কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারসহ উপজেলার সবকটি বৌদ্ধ বিহার পাড়ায় ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে: উৎসব পালনের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এ উৎসব শুরু হবে।


তারা বলেন, উৎসবের প্রথম দিন বিভিন্ন পাড়া থেকে আগত উপাসক উপাসিকাগণ পঞ্চশীল গ্রহণের জন বৌদ্ধ মন্দিরে অবস্থান করবেন। বৃহস্পতিবার রাতে উৎসব শেষ হবে।


এ বিষয়ে লামা থানা ওসি (তদন্ত) মো. লেয়াকত আলী বলেন, ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে:’ উৎসব যেন নির্বিঘ্নে পালন করতে পারেন এজন্য উপজেলার প্রতিটি কেয়াং বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব সম্পন্ন হবে।


বিবার্তা/আরমান/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com