শিরোনাম
ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ পাহাড়ের বাসিন্দাদের সরানো যাচ্ছে না
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৪১
ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ পাহাড়ের বাসিন্দাদের সরানো যাচ্ছে না
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে মৃত্যুঝুঁকিতে বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার। প্রশাসনের আলটিমেটাম, বার বার উচ্ছেদ করার হুমকি এবং ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানে একাধিক দফায় উচ্ছেদ করার পরও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরানো যাচ্ছে না।


এরই মধ্যে শনিবার রাতে নগরীর দুটি এলাকায় দেয়াল ও পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিন জনসহ চার জন নিহত হয়েছে।


চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্ক করার পাশাপাশি বার বার উচ্ছেদ করা হলেও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের টনক নড়ছে না।


চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের বার বার সরে যেতে গত এক সপ্তাহ ধরে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছিল। এর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীর কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে অধিবাসীদের সরিয়ে নেয়া হয়।


কিন্তু বৃষ্টি কমলে এবং রোদের দেখা পেলে তারা আবার ওইসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস শুরু করে। এর ফলে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।


প্রায় প্রতি বছরই প্রবল বর্ষণ কিংবা বর্ষা মৌসুমে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটে। বার বার প্রাণহানি এবং প্রশাসনের সতর্কতা সত্বেও পাহাড়ের পাদদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের সরিয়ে আনা যাচ্ছে না।


বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে সহস্রাধিক পরিবার মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।


বাংলাদেশে পাহাড় ধসে প্রাণহানিকে আর্থ-সামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছেন একজন বিশেষজ্ঞ।


গত কয়েক দিনে ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে বর্ষণ শুরু হলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ এলাকায় সরে যেতে বলা হলেও অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ আবাস ছেড়ে যায়নি।


এই মধ্যে শনিবার রাতে প্রবল বর্ষণে নগরীর রহমান নগরে দেয়াল ধসে একজন এবং আকবর শাহ থানার ফিরোজশাহ কলোনী এলাকায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিন জন নিহত হয়।


চট্টগ্রাম মহানগর এবং সংলগ্ন এলাকার পাহাড়গুলোর মধ্যে ১৩টি পাহাড় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়গুলো হচ্ছে- বাটালি হিল, টাইগারপাস ইন্ট্রাকো সংলগ্ন পাহাড়, বিআইটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড়, শেরশাহ মীর পাহাড়, একে খান পাহাড়, টাইগারপাস জেলা পরিষদ পাহাড়, লেকসিটি আবাসিক এলাকার সংলগ্ন পাহাড়, সিডিএ অ্যাভিনিউ পাহাড়, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট পাহাড়, চটেশ্বরী জেমস ফিনলে পাহাড়, কৈবইল্যাধাম পাহাড় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাহাড়।


এসব পাহাড়ে বালির পরিমাণ বেশি। বৃষ্টির সময় বালিতে পানি ঢুকে নরম হওয়ার পর ধসে পড়ে। বৃষ্টি ছাড়া বূমিকম্পে যে কোনো মুহূর্তে পাহাড়গুলো ধসে পড়তে পারে।


চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর মধ্যে প্রতিটি পাহাড়ে গড়ে দেড়শত থেকে দুইশত পরিবার বসবাস করে থাকে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা।


এ সব স্থাপনায় রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। দুর্যোগ দেখা দিলে এসব পাহাড়ে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা অসম্ভব হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে রাতে পাহাড় ধসে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার শুরু করা যায় না বলে প্রাণহানি বেশি ঘটে।


পাশাপাশি বিভিন্ন মালামাল রক্ষা করার তেমন সুযোগ না থাকায় চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ধসে প্রাণহানির পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।


২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জন মানুষ মারা যায়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের জুন মাসে বাটালি হিলে আবার পাহাড় ধসে ১৭ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।


বিবার্তা/জাহেদ/কাফী


>>চট্টগ্রামে পাহাড় ও দেয়াল ধসে মৃত ৪

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com