শিরোনাম
গুম হওয়া গৃহবধূ এক বছর পর ফিরলেন সন্তান নিয়ে!
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১১:২৪
গুম হওয়া গৃহবধূ এক বছর পর ফিরলেন সন্তান নিয়ে!
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

প্রেমের টানে এক বছর আগে স্বেচ্ছায় গুম হওয়া আছিয়া (১৮) নামে এক গৃহবধূ ৩ মাসের শিশু সন্তান নিয়ে আবার ফিরে এসেছেন।


তবে এ ফিরে আসা ৩ বছর সংসার করা স্বামীর ঘর কিংবা বাবার বাড়ি নয়। এসেছেন প্রেমিক স্বামীর ঘরে। আর শিশু সন্তানটির বাবা নাকি প্রেমিক স্বামী জুবায়ের।


আছিয়াকে খুন ও গুম করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে সেই সময় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছিল সাবেক স্বামী কাজী তৌহিদ হাসান ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের কাশতলা গ্রামে।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩ বছর আগে উপজেলার বন্ধকুলিয়া গ্রামের মৃত কাজী ফজলুর রহমানের ছেলে কাজী তৌহিদ হাসান ওরফে রিপনের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার সাঙ্গালিয়া পাড়া গ্রামের আবদুল হামিদ কারীর মেয়ে আছিয়া খাতুনের। বিয়ের পর বেশ ভালই চলছিল দাম্পত্য জীবন। এরই মধ্যে হঠাৎ করে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর স্বামীর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন আছিয়া।


অনেক খোঁজা-খুঁজি করে তাকে না পেয়ে ঘটনার এক দিন পর স্বামী রিপন কাজী ঘাটাইল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এদিকে বোন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে তার বোন জামাই রিপন কাজীর বিরুদ্ধে খুন ও গুমের অভিযোগ এনে টাঙ্গাইল কোর্টে একটি মামলা করেন। রিপন কাজীসহ তার মা ও তিন ভাইকে এ মামলায় আসামি করা হয়। এক বছর ধরে উভয়ের মধ্যে চলতে থাকে মামলা-পাল্টা মামলা। এরই মধ্যে গত কয়েকদিন আগে আবির্ভাব হয় আছিয়ার। কোলে তিন মাসের শিশু সন্তান।


প্রেমিক স্বামী জুবায়েরের বাড়ি উপজেলার কাশতলা (সাতাইপাড়া) গ্রামে আছিয়ার দেখা মেলে। শিশু কোলে আছিয়াকে দেখে জুবাইরের বাড়ির লোকজন প্রথমে মনে করেছিল হয়তো ছেলের সঙ্গে বেড়াতে এসেছে। আছিয়া জুবায়েরের স্ত্রী এমন পরিচয় জানতে পেরে পরিবারসহ বাড়ির সবাই বিস্মৃত হয়। পরে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে আসল ঘটনা।


আছিয়া খাতুন জানায়, আগের স্বামী রিপন কাজী আমাকে মাঝে মধ্যেই নির্যাতন করত। এ কথা আমি কাউকে বলিনি। এ অবস্থায় একদিন মোবাইলে জুবায়েরের সঙ্গে পরিচয় হয়। গড়ে ওঠে গভীর প্রেমের সম্পর্ক। প্রেমের টানে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে আসি কালিহাতী। জুবায়েরকে জানাই আমি সব ছেড়ে চলে এসেছি। এরপর সেখান থেকে তার হাত ধরে বগুড়ায় চলে যাই। সেখানে দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয় সবুজের বাসায় দুই মাস থেকেছি। পরে বগুড়া নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। বগুড়া থেকে চলে এসে আমরা বাড়ির কাছে হামিদপুর বাজারে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করি। আমি আমার পরিবারের সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।


এব্যাপারে জুবায়েরের বাবা আবদুল লতিফ বলেন, আমার ছেলে হামিদপুর বাজারে রং মিস্ত্রির কাজ করে। বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানেই থাকে। সে যে বিয়ে করেছে একথা বাড়ির কেউ জানে না। ছেলেও আমাকে বলেনি। এমনকি এলাকাবাসীও জানে না। একই কথা বললেন জুবাইরের মা ফরিদা ইয়াসমিন।


আছিয়ার সাবেক স্বামী রিপন কাজী বর্তমানে প্রবাসী। কথা হয় তার ছোট ভাই কাজী গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আছিয়া নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাই রিপন কাজীকে সঙ্গে নিয়ে উনার বাবার বাড়ি যাই। তারা আমাদেরকে সহযোগিতা না করে খুন ও গুম মামালায় ফাঁসানোর হুমকি দেয় এবং পরে মামলা করে। যেহেতু এক বছর পর মেয়েটি বেরিয়ে এসেছে, তাই প্রমাণ হয়েছে যে তারাই এত দিন এ নাটক সাজিয়ে আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করেছে।


মামলার বাদী আছিয়ার ভাই নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।


এ প্রসঙ্গে ঘাটাইল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ (মামুন) বলেন, এ ব্যাপারে আমি অবগত নই, আমার কাছে দুই পক্ষের কেউ অভিযোগ দিতে আসেনি তবে অভিযোগ নিয়ে আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com