ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলার শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়েছে সেবামূলক সংস্থা কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন (কেএমএফ)। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তোলার অংশ হিসেবে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংস্থাটি।
তিনমাসব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ১০৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬৮ জন ছেলে এবং মেয়ে ৩৫ জন। তিনটি আলাদা ব্যাচে ব্যবহারিক ক্লাসের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়।
তিনমাসের এই প্রশিক্ষণটি ছিল কম্পিটারের মৌলিক বিষয়বস্তু। হাতেকলমে কম্পিউটার শিক্ষায় এটি শিক্ষার্থীদের ভীত তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন প্রশিক্ষকরা।
প্রশিক্ষণার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল কম্পিউটার শিখবো। সহপাঠীদের দু-একজন আগেই শিখেছে। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে আমি পারিনি। কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের কারণে আমার ইচ্ছাপূরণ হয়েছে।’
এ ব্যাপারে কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘বেকারত্ব ঘোচাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়াস নিয়েকম্পিউটার প্রশিক্ষণের এই কর্মসূচি একটি চলমান কার্যক্রম। আগামীতে তিন উপজেলাতে আরো কয়েক হাজার ছেলেমেয়েকে এই প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা হাতে রয়েছে।’
বোয়ালমারীর শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, ‘তিনমাসের প্রশিক্ষণে আমাদের কম্পিউটারের মৌলিক বিষয়গুলো ব্যবহারিক ক্লাসের মাধ্যমে শেখানো হয়েছে। এখন আমি কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারি। টাইপসহ মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্টে কাজ করতে পারি।’
কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন দীর্ঘ সময় ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এগিয়ে আনার কাজ করছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতের জন্য আর্থিক সহায়তা করে। এ ছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী বিনামূল্যে বই-খাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করা হয়।
শিক্ষার পাশাপাশি সেবামূলক এই সংস্থাটি দীর্ঘদিন সময় ধরে অসহায় ও দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। সামাজিক এসব সেবামূলক ও জনহিতকর কাজের মাধ্যমে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক সুপরিচিত লাভ করেছে। প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া মাদকবিরোধী প্রচারণাতেও ভূমিকা রাখছে সংস্থাটি।
আরিফুর রহমান দোলন জানান, শুধু দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলাই নয়, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতেও কাজ করছেন তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি।
দু’হাজার মানুষকে বিনাখরচে চক্ষু চিকিৎসা প্রদান
কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশন পরিচালিক চক্ষু ক্যাম্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১৮১১ জনকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট জাতীয় শোকের মাস উপলক্ষে বোয়ালমারী উপজেলার সহস্রাইল পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় চক্ষু ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এই ক্যাম্পে ৪৫৭ জন রোগীকে চক্ষু সেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে ছানি অপসারণ ও লেন্স সংযোজনের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয় ৫২ জনের চোখে। চশমা দেয়া হয়েছে ১৪৭ জনকে। বাকিদের জরুরি ওষুধ দেয়া হয়েছে।
এর আগে ১৪ মে বোয়ালমারী উপজেলার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এখানে ৫০০ জন দুঃস্থ মানুষকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা করা হয়। এদের মধ্যে ১৩৪ জন রোগীকে চশমা এবং ৪২ জনের চোখের ছানি অপসারণ ও লেন্স সংযোজন করা হয়। সবাইকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয়।
এ বছরের ২৯ এপ্রিল মধুখালী উপজেলার কামারখালীতে উদ্দীপন বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী ওই ক্যাম্পে ৩৫৪ জন রোগীর চোখের নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৩০ জনের চোখে ছানি অপসারণ ও লেন্স সংযোজন করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ১০১ জনকে চশমা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বাকি ২৮৩ জন রোগীর চিকিৎসার জন্য ওষুধ দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ২৮ ও ২৯ নভেম্বর দুদিনব্যাপী আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ ক্যাম্পাসে চক্ষু ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনে ৫০০ রোগীর চক্ষু রোগের নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৪২৫ জনকে ওষুধ প্রদান করা হয়। ১৫০ জন রোগীকে প্রয়োজন অনুযায়ী চশমা দেয়া হয়। এ ছাড়াসম্পূর্ণ বিনামূল্যে ২১ জন রোগীরচোখে ছানি অপসারণ ও লেন্স সংযোজন করা হয়।
বিবার্তা/ফাহাদ/সোহান
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]