শিরোনাম
সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কারখানার বর্জ্য
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৪৯
সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কারখানার বর্জ্য
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রামের বিখ্যাত কর্ণফুলী নদী কলকারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে। শুধু নদী নয়, মাঝে মধ্যে সড়কও তলিয়ে যাচ্ছে এসব কারখানার বর্জ্যের পানিতে। সম্প্রতি কর্ণফুলী উপজেলার মোড়ে মোড়ে এমন চিত্র দেখা যায়।


কর্ণফুলী মইজ্জ্যারটেক এলাকায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি গ্রুপ অব কোম্পানির সয়াবিন তৈল কারখানার বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে চলাচলের সড়কে।


এমনকি এ কারখানার ভেতরে অবস্থিত টিন, সিমেন্ট, ভেজিটেবল অয়েল তৈরিতে বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানিতে সয়লাব হচ্ছে মইজ্জ্যাটের সড়ক থেকে শিকলবাহা কালারপোল সড়কের অলিগলি।


কোনো ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপন ছাড়াই চলছে কর্ণফুলী এলাকায় এরকম নানা কলকারখানা। ডাইংয়ের ক্যামিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনো ড্রেন নির্মাণের জায়গা না থাকায়, মইজ্জ্যাটেক মূল সড়কের উপর দিয়ে এ সকল বর্জ্য মিশ্রিত পানি প্রবাহিত হচ্ছে।


ফলে বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানির উপর দিয়েই এ পথে যাতায়াত করে হাজারো শ্রমিকসহ স্থানীয় মসজিদের মুসল্লি এবং পথচারী। পথ চলতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ভোগ ও কাপড় নষ্টের শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষদের।


একই এলাকায় আশপাশের শিল্পাঞ্চলের মিল-কারখানাতে পরিবেশ রক্ষার জন্যে ইটিপি প্লান্ট স্থাপন চোখে পড়েনি। পরিবেশ অধিদফতর ও সরকার তাগিদ দিলেও হয়তো কর্তৃপক্ষ সেদিকে কোনো তোয়াক্কায় করছে না।


যার ফলে জনবহুল পরিবেশে কলকারখানা গড়ে ওঠায় দিন দিন আশে পাশে বসবাস করা মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে। এসব কলকারখানার বিকট শব্দ, অপসারিত নানা রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে মিশে যাওয়ায় আশেপাশের শিশুদের প্রায় নানা চর্মরোগ ও শ্বাস কষ্টে ভোগতে দেখা যায়।


অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদফতরের কতিপয় কর্মকর্তাদের মাসোয়ারা দিয়ে মালিক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বহুদিন ধরে।


এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে তাগাদা দিতে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় অভিযোগ। ফলে সহজে কেউ এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কথা বলতে নারাজ।


সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মইজ্জ্যাটেক মূল সড়কের উভয় পাশে একাধিক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এ সকল কারখানার ক্যামিক্যাল ও বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানি সড়ক হয়ে বিভিন্ন খাল বেয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে।


এলাকাবাসী জানান, এ পর্যন্ত পরিবেশ অধিদফতরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ইটিপি প্লান্ট স্থাপন ও অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষের অনিয়মের কারণে তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কখনো দেখেননি।


এলাকাবাসী আরো জানান, এসব কোম্পানি বা কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য খুঁটির জোরে পরিবেশ অধিদফতরের এ ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কায় করছে না। মানছে না সরকারি কোনো নিয়ম নীতি। সাধারণ মানুষের চলাচলের ক্ষতি হলে তাদের কিছু যায় আসেনা। কেননা মালিক কর্তৃপক্ষরা দেশের বড় বড় ভিআইপি আর সিআইপি।


ফজল করিম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, প্রকাশ্যে কলকারখানার বর্জ্য মূল সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এবিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যদিও এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কলকারখানার ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এবিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।


অনেকে মনে করেন এসব কারখানায় বর্জ্য পরিশোধনের জন্যে ইটিপি বসানো দরকার। মূল সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া বর্জ্য মিশ্রিত পানি খালে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা উচিত।


এমন ব্যবস্থা না নেয়ায় জনদূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। যানবাহন গুলো রাস্তার উপরে জমে থাকা বর্জ্য মিশ্রিত নোংরা পানি ছিটিয়ে নষ্ট করছে পথচারীদের পরিধেয় পোশাক।


প্রতিদিন এই রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে যা প্রচণ্ড দুর্গন্ধ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত এই দুর্গন্ধ পথচারীদের শরীরে প্রবেশ করছে এবং অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি করছে।


নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক শিক্ষক জানান, বর্জ্য অপসারণের নীতিমালা অনুসরণ না করে ওই কোম্পানিটি স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ করে যাচ্ছে। যা পরিবেশ আইনের পরিপন্থী। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর এসব কারখানার প্রতি অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।


বিবার্তা/জাহেদ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com