শিরোনাম
পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য সিরাজগঞ্জের বারাকান্দি গ্রাম
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৪১
পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য সিরাজগঞ্জের বারাকান্দি গ্রাম
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সিরাজগঞ্জের বারাকান্দি ও ধলেশ্বর গ্রামে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জের ধরে পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। অভিযোগ রয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর আসামি ধরার নামে বাড়াকান্দি গ্রামে ব্যাপক ভাঙচুর ও নিরীহ গ্রামবাসীকে বেধড়ক মারপিটসহ তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ। কয়েক জন প্রভাবশালীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কামারখন্দ থানার পুলিশ এসব তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।


গ্রামবাসীর অভিযোগ, কামারখন্দ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশফাকুর রহমান এবং তার সঙ্গীরা নিরাপরাধ লোকজনকে থানায় নিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের পর টাকা আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে।


জানা গেছে, ঈদের আগে মুঠোফোনে একটি মেয়েকে উত্ত্যেক্ত করার ঘটনায় বাড়াকান্দি ও পাশের ধলেশ্বর গ্রামের কয়েকজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের ঘটনায় শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর গত রবিবার থেকে দু’গ্রামের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশসহ ২০ জন আহত হন। এ ঘটনায় ধলেশ্বর গ্রামের সারোয়ার হোসেন, আবু মুছা ও কামারখন্দ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশফাকুর রহমান বাদী হয়ে ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে। বাড়াকান্দি গ্রামের পক্ষ থেকে সিরাজগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল-২ এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়।


বাড়াকান্দি গ্রামের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন,‘পুলিশের দায়ের করা মামলায় কামারখন্দ থানার উপ-পরিদর্শক আশফাকুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাড়াকান্দি গ্রামে অভিযান চালায়। তারা আসামি ধরার নামে গ্রামের মধ্যে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও মারধর করে। পুলিশ রায়দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদের বাড়ি ও আমার বাড়িসহ সাতটি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করে। বর্তমানে গ্রামের সব পুরুষ মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।


একই গ্রামের শাহনাজ বেগম ও আসমা বেগম জানান, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তারা বাড়ির গেটে এলোপাথারি লাঠির আঘাত করে গেট ভেঙে বাড়িতে ঢুকে পুলিশ। কথা বার্তার এক পর্যায়ে তারা বাড়ির আসবাবপত্রসহ রান্নার চুলা ভেঙে ফেলেছে। ঈদ উপলক্ষে জামাইরা বেড়াতে এসেছিল তাদেরও ধরে নিয়ে গেছে। বর্তমানে কোনও পুরুষ মানুষ পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছে না।



ওই গ্রামের নুরাল সরকারের স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, ‘এমন ভয়াবহ নির্যাতন কোনদিন দেখি নাই। আমি আমার ছেলের বউদের নিয়ে শুয়ে ছিলাম। শেষ রাতের দিকে কামারখন্দ থানার উপ-পরিদর্শক আশফাকুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বাড়িতে এসে আমাকে খারাপ ভাষায় গালাগাল করে। বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক বাল্ব, রান্নার চুলা পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে। এছাড়াও পুলিশের লাঠি আঘাতে আমার ছেলের বউ এর হাত ভেঙে গেছে।’


এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক (এস আই) আশফাকুর রহমান বলেন, ‘কারও বাড়ি ভাঙচুর করা হয়নি। দুই পক্ষের গোণ্ডগোলের সময় হয়তো তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে। কোনও নিরাপরাধ ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় কাউকে আনা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে নেওয়াতে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এছাড়া সাধারণ মানুষজনকে ধরপাকড় ও ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।



কামারখন্দ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আতোয়ার রহমান বলেন, দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সৃষ্ট ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে তারাও গ্রামবাসীদের হাতে মারধরের শিকার হয়। পুলিশ মামলার আসামি হিসেবে সম্পৃক্তদের আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে। কোনও প্রকার ভাঙচুর বা মারধরের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে পুলিশ কারও বাড়ি ভাঙচুর ও মারধর করেছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/রানা/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com