শিরোনাম
কবরস্থানে লাশ দাফন ফি ২০ হাজার টাকা
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০১৮, ১১:৫৫
কবরস্থানে লাশ দাফন ফি ২০ হাজার টাকা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কবরস্থানে লাশ দাফন প্রতি ২০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ ও আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ইউনিয়নের খারজানা আলীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে এ প্রথা চালু করা হয়েছে। চালু হওয়া এ অলিখিত প্রথার ফলে মৃতদেহ দাফন করতে না পারাসহ ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয়রা। তবে লাশ দাফনে ফি আদায়ের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা এ প্রথা বন্ধে কার্যকর ভূমিকাও রাখতে পারছেন না হতদরিদ্র এই গ্রামবাসী।


আধুনিক এ সভ্যতার যুগে মধ্যযুগীয় ও বর্বর এই পন্থায় টাকা উপার্জনকারীদের ক্ষমতার মূল উৎস কোথায় জানতে চায় নীরিহ ও ভুক্তভোগী খারজানা গ্রামবাসী। তবে বর্বরোচিত এ অপরাধে লিপ্তদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা।


জানা যায়, ১৯৮২ সালে ৩৮ শতাংশ স্থানীয়দের দানকৃত জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় খারজানা কবরস্থান। খারজানা গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মানুষের লাশ দাফনের প্রয়োজনে এ কবরস্থানটি স্থাপিত হয়। এ কবরস্থানের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার স্বার্থে দুই বছর মেয়াদী একটি পরিচালনা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে ও পরিচালনা কমিটির তত্বাবধানেই পরিচালিত হয়ে আসছে কবরস্থানের উন্নয়ন আর রক্ষণাবেক্ষণ। তবে প্রতিষ্ঠাকালে কবরস্থানে লাশ দাফন বাবদ ছিলনা কোনো ফি।


স্থানীয়দের অভিযোগ, কবরস্থান পরিচালনার বর্তমান কমিটির মেয়াদকাল শেষ হলেও জোরপূর্বক দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছে এ কমিটি। এ কমিটিই দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অলিখিত ভাবে এ লাশ দাফন বাবদ ২০ হাজার টাকা জমা দেয়ার প্রথাটি চালু করেন। এ প্রথা চালুর ক্ষেত্রে স্থানীয়দের কোনো মতামত বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়াই কমিটি নেতৃবৃন্দ এককভাবে ও জোরপূর্বক এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। এই লাশ দাফন বাবদ টাকা আদায়ে স্থানীয়দের কোনো সম্মতি না থাকলেও কমিটি নেতৃবৃন্দ সভাপতি তফিজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ও এলজিইডি কর্মকর্তা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের, সদস্য লাল মিয়া ও সোলায়মান, নুরুল ইসলামসহ কতিপয় ব্যক্তি জোরপূর্বক এই টাকা উত্তোলনে লিপ্ত রয়েছেন বলেও জানান তারা।


এছাড়া উত্তোলনকৃত এই টাকার কোনো রশিদও দিচ্ছেন না উত্তোলনকারীরা। যারা টাকা দিতে পারছে না বা টাকা দিতে আপত্তি করছেন তাদের লাশ ওই কবরস্থানে দাফনও করতে দিচ্ছেন না তারা। তবে এভাবে টাকা উত্তোলন করা হলেও কবরস্থানের মান উন্নয়নে কার্যকর কোনো ভূমিকাও রাখছে না এই কবরস্থান পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ।


সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে কবরস্থানের কোষাধ্যক্ষ রমজান আলীর লিখিত খাতায় লাশ দাফন বাবদ টাকা উত্তোলনের কিছু হিসেব থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৩ মার্চ মৃত্যুবরণকারী খারজানা উত্তরপাড়ার মিয়া উল্লাহর ছেলে সেনা সদস্য রাজ্জাকের দাফন বাবদ ফি আদায় করা হয় ১২ হাজার টাকা। একই বছরের ২৩ জুন একই গ্রামের গোলজারের মেয়ের লাশ দাফন বাবদ ১৫শ, ৮ সেপ্টেম্বর উত্তরপাড়ার আব্দুস ছবুর মুন্সীর স্ত্রীর লাশ দাফন বাবদ ৫ হাজার, ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল পূর্বপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা রহিমুদ্দিনের স্ত্রীর লাশ দাফন বাবদ ৫ হাজার, ২২ এপ্রিল কাতুলী আলমের লাশ দাফন বাবদ ১৫শ, ২৮ এপ্রিল ঝিনাইপাড়াস্থ নুরু ইসলামের লাশ দাফন বাবদ ৭ হাজার, ৪ মে উত্তরপাড়ার আব্দুল মালেকের মেয়ের লাশ দাফন বাবদ ১৫শ টাকা উত্তোলন করা হয়।



এ নিয়ে মৃত মায়ের লাশ দাফন করতে না পারা ভুক্তভোগী খারজানা উত্তরপাড়ার মনির হোসেন জানান, গত ১৭ আগস্ট সকালে মৃত্যুবরণ করেন তার মা ফিরোজা বেগম। তবে কবরস্থান পরিচালনা কমিটির দাবিকৃত ওই ২০ হাজার টাকা দিতে না পারায় তার মাকে ওই কবরস্থানে দাফন করতে দেয়া হয়নি। এ কারণে বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ির পাশে তার মায়ের লাশ দাফন করেন।


ধর্মীয় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ও সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে লাশ দাফন বাবদ এ ফি আদায়ে স্থানীয় হতদরিদ্র পরিবারগুলো চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন খারজানা ঘোনাপাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদের ঈমাম মো. কালাচাঁন মুন্সী।


খারজানা কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সদস্য লাল মিয়া লাশ দাফন বাবদ টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে জানান, নির্দিষ্ট পরিমাণে কোনো টাকা নেয়া হচ্ছে না। যদিও অতীতে এ টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও এখন কবরস্থানে মাটি ভরাটসহ নানা প্রয়োজনে এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারের সামর্থ্য অনুসারে এই ফি নেয়া হচ্ছে।


এ ব্যাপারে ও বক্তব্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং খাগড়াছড়ি এলজিইডি কর্মকর্তা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের বাসায় অবস্থান করা স্বত্বতেও নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত ছিলেন। এছাড়া বুধবার তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।


কমিটির সভাপতি তফিজ উদ্দিন অতি বয়োবৃদ্ধ ও শয্যাশায়ী থাকায় মানবিক কারণে তার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়নি।


এ প্রসঙ্গে পোড়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজমত আলী জানান, খারজানা কবরস্থানে লাশ দাফন বাবদ ২০ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ ও আদায় করার কোনো অভিযোগ তিনি এখনো পাননি। তবে যদি এ ধরণের অপরাধ সংগঠিত হয় তাহলে তিনি পরিষদের পক্ষ থেকে এই অপকর্ম বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com