শিরোনাম
বাঁশের সাঁকোই ভরসা ১৫ গ্রামের মানুষের
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০১৮, ০৯:৫৭
বাঁশের সাঁকোই ভরসা ১৫ গ্রামের মানুষের
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ডাকাতিয়া নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। ৩৫ বছর ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত সাঁকো দিয়েই চলাচল করছে লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলার ১৫টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও ছোটশিশুরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বারবার আশ্বাসের পর সেতু নির্মাণ না হওয়ায় নীরব ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। তারপরেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তির জন্য স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি তাদের।


জানা যায়, রায়পুর উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের গাজীনগর বাজার থেকে শায়েস্তানগর দাখিল মাদ্রাসার সামনে দিয়ে রায়পুর শহরের সাথে মিলেছে শায়েস্তানগর সড়কটি। রাস্তাটি দীর্ঘদিন থেকে পাকা হলেও হয়নি নদী পারাপারে স্থায়ী সেতু। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই রুটের পথচারীদের। বেশি দুর্ভোগ হচ্ছে, মুমূর্ষু রোগী, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিশু-বৃদ্ধদের। প্রতিদিনই সাঁকোটি পার হতে গিয়ে আহত হচ্ছেন অনেকে। কেউবা নদীতে পড়ে হচ্ছেন গুরুতর আহত।


অন্যদিকে স্থায়ী সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষতিগস্ত হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বার বার স্থায়ী সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।



আরো জানা যায়, রায়পুর উপজেলার পূর্বলাছ, দেবিপুর, গাজীনগর, চরপাতা ও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ আলোনিয়া, দেবিপুর, সন্দেশপুর, সাহেবগঞ্জসহ ১৫টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এছাড়াও স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিশু-বৃদ্ধরাও চলাচল করছে এই সেতু দিয়ে। পূর্বে নৌকায় চলাচল করলেও ৩৫ বছর ধরে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে নদী পারাপার হচ্ছেন।


স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বাশার জানান, ডাকাতিয়া নদী পার হওয়ার জন্য গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করছে। প্রতিদিনই সাঁকোটি দিয়ে কয়েক হাজার লোক যাতায়াত করছে। বর্তমানে সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকারে ধারণ করেছে।


কামাল নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, বিভিন্ন সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্টরা স্থায়ী সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও তা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। এতে সবার মাঝে নীরব ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত প্রায় ৭০ ফুট দৈর্ঘ্য সাঁকোটি যে কোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।



কলেজ শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, এই সাঁকোটি দিয়ে দুর্ভোগের মধ্যে প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করে। প্রায় সময় নদীতে পড়ে গিয়ে তাদের বই-খাতা ও পোশাক ভিজে যায়। ফলে সেদিন আর তাদের প্রতিষ্ঠানে যাওয়া হয় না। স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাগব করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটি প্রত্যাশা তার।


রায়পুর শহরের ব্যবসায়ী আজাদ জানান, আধুনিক যুগেও বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয় তাদের। গত বছর তার স্কুল পড়ুয়া ছেলে সাঁকোটি পার হওয়ার সময় নদীতে পড়ে যায়। পরে পাশের লোকজন নদী থেকে তাকে তোলে। তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।


শায়েস্তানগর ইসলামীয়া মিশন দাখিল মাদ্রাসার সুপার শেখ মো. আবদুল কুদ্দুছ ফারুকী বলেন, স্থায়ী সেতু না থাকায় এখানকার মানুষ আজ অবহেলিত। বর্ষাকালে সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। অথচ সেতুটি নির্মাণ হলে ভোগান্তি লাগবের পাশাপাশি যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতো বলে তিনি মনে করেন।



স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছর পরেও ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ডাকাতিয়া নদীর এ অংশের ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলে গ্রামবাসী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের উপকার হবে। এজন্য নদীটির ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য কয়েকবারই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন, কিন্তু কোনো সুফল পাননি বলেও জানান তিনি।


উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আক্তার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ডাকাতিয়া নদীর ওই অংশে সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প ফাইল মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বাজেট আসলেই সেতু নির্মাণ করা হবে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী বলেন, গাজীনগর গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে জনদুর্ভোগের বিষয়টি জেনেছি। আগামী বাজেটে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থায়ী সেতুর নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হবে।


বিবার্তা/ফরহাদ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com