কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে উত্তরের সীমান্ত জেলা জয়পুরহাটের চামড়ার মোকামে বেশ জোরেশোরেই চলছে প্রস্তুতি। প্রতিবার শুধুমাত্র কুরবানির ঈদে এখানকার চামড়া বাজার থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের পশুর চামড়া ঢাকার ট্যানারিগুলোতে সরবরাহ করা হয়।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা গত কয়েক বছরের পাওনা টাকা এখনো পরিশোধ করেননি সে কারণে নতুন চামড়া কিনতে পুঁজি সংকটে রয়েছেন তারা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, আমতলী এলাকায় চামড়ার আড়ৎ গুলোতে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি। আড়ৎ গুলো মেরামত, রং করা ধোওয়া মোছা করা হচ্ছে বেশ জোরেশোরেই।
প্রতি বছর শুধু মাত্র কুরবানির ঈদের সময় ট্যানারিগুলো ছাড়া ও ঢাকা, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারা এসে গরু, ছাগলের চামড়া ক্রয় করে। এবার ঢাকার বাহিরে ট্যানার্স এসোসিয়েশন গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৩৫ টাকা থেকে ৪০ এবং খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা হিসাবে নির্ধারণ করা করেছে।
প্রতি বছর ট্যনারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়ে মূল ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশংকাও থাকে এখানে। সেই সাথে চামড়ার প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম এবং শ্রমিকের মজুরী বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ছাড়াও ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া থাকায় চরম পুঁজি সংকটে এখানকার ব্যবসায়ীরা।
জয়পুরহাটের বড় চামড়া ব্যবসায়ী শামীম হোসেন জানান, কুরবানিকে সামনে রেখে তারা আড়ৎগুলো মেরামত করছেন। গত বারের চামড়ার টাকা এখনো ট্যনারির মালিকদের কাছে পাওনা রয়েছে। চামড়ার বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করায় লাভের মুখ দেখতে পারেনি কয়কে বছর থেকে।
তিনি আরো বলেন, একদিকে লোকসান অন্যদিকে বকেয়া এভাবে তাদের মূলধন শেষ, ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকগুলো নতুন করে লোন দিচ্ছে না, ফলে আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে। তিনি জানান, ট্যানারি মালিকরা সবসময় সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনে এবং দাম পরিশোধের বেলাতেও সিন্ডিকেট করে অল্প অল্প করে টাকা দেয় যা দিয়ে তারা ব্যবসা চালাতে পারে না।
চামড়া ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, লবণের দাম স্থিতিশীল, চামড়া পাচাররোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে চামড়া শিল্প লাভের মুখ দেখবে।
কুরবানির আগেই পুঁজি সরবরাহ করে চামড়া শিল্পকে সচল রাখবে ট্যানারি মালিকরা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নবাব সরদার জানান, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি চামড়া শিল্পের প্রসারে কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধ সেই সাথে বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ চামড়া শিল্প টিকে থাকবে।
এদিকে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রাশেদ মোহাম্মদ আনিসুল হক জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাটার ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তারকাটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এই জায়গাটিকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।
জয়পুরহাটের ব্যবসায়ীদের দাবি বিগত বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধে ট্যানারীমালিকদের যেন কোনো উদ্যোগ নেয়, সেই সাথে ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে তাদের লোন দেয় সে ব্যাপারে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিবার্তা/শামীম/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]