শিরোনাম
ঝালকাঠিতে জমে উঠেছে কামারপাড়া
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০১৮, ১১:৪০
ঝালকাঠিতে জমে উঠেছে কামারপাড়া
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঈদের বাকি মাত্র দুই দিন। সবার মধ্যেই চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। আর ব্যস্ততা বেড়েছে কামার পল্লীতে। টুং টাং শব্দে নির্ঘুম দিন কাটছে কামার শিল্পীদের।


শেষ সময়ে দিনরাত দা-ছুরি, বটি, কুড়াল, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি তৈরিতে ব্যস্ত ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন উপজেলার কামার শিল্পীরা। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও কামার পল্লী এখন লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দে মুখরিত। চাহিদা মতো নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতাদের হাতে এসব কামার সরঞ্জামাদি তুলে দিতে যেন ঘুম নেই তাদের চোখে। দিনরাত সমান তালে তারা এখন দা, বটি, ছুরি, চাকু, কুড়াল, চাপাতি তৈরি এবং শান দেয়ার কাছে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেখে মনে হয় দম ফেলবারও সময় নেই কারো। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কামার ও ক্রেতারা।


জেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশু জবাই করার উদ্দেশ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে দা-বটি, ছুরি , চাকু, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি তৈরি ও কেনার ধুম পড়েছে। আর এসব কামার সরঞ্জামাদি বানানোর কাজে ব্যস্ত কামার শিল্পীরা। একদিকে হাপরের আগুনের শিখা অন্যদিকে হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটানোর টুং টাং শব্দে তৈরি হচ্ছে এসব কামার সরঞ্জামাদি। কেউ নতুন নতুন দা, বটি, চুরি, চাকু তৈরি করছে, কেউ আবার এসব সরঞ্জামাদি শান দিচ্ছে। এছাড়াও ক্রেতাদের চাহিদা মতো পুরানো সরঞ্জামাদিও মেরামতের কাজে ব্যস্ত তারা। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও কোরবানির ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প।


সরেজমিন দেখা যায়, কামারদের দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দা-বটি, ছুরি, চাকুসহ লোহা ও ইস্পাতের তৈরি ছোট বড় বিভিন্ন ধারালো সরঞ্জাম। ক্রেতারা পছন্দ মেতো এসব সরঞ্জাম কিনছেন। ওজনের উপর নির্ভর করে একটি বটি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, দা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, ছুরি ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, চাকু ১৫০ থেকে ৩০০, চাপাতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এছাড়াও ছোটবড় বটি, দা, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি শান দেয়ার জন্য মজুরি ৫০ থেকে শুরু করে (কাজের উপর নির্ভর) ২০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।


জেলার একাধিক কামার শিল্পী জানান, এক সময় লোহা আগুনে পুড়িয়ে দা, বটি কোদাল, সাবল, চাকু, ছুরি, টেটা, কুড়াল, চাপাতিসহ কৃষি উপকরণের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি তৈরিতে কামারদের চাহিদা ও কদর ছিল। বর্তমানে মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরির ফলে কামারদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তোবা এ পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের এসব সরঞ্জামাদি তৈরি করতে হিমসিম খেতে হয়। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে এসব সরঞ্জামাদি তৈরি কাজে চাপ বাড়ার সঙ্গে আয় রোজগারও বেশি হয়। ফলে কষ্ট হলেও যথা সময়ে ক্রেতাদের হাতে এসব মালামাল বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি।


রাজাপুর উপজেলার বাগরি বাজারে বটি-দা কিনতে আসা ক্রেতা নুরনবী তালুকদার জানান, তিনি কাঁঠালিয়া থেকে এসেছেন। কামারের দোকানে গিয়েছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে দা-বটি তৈরি করে দিতে পারবে না বলেই তিনি বাগরি বাজারে এসেছেন।


রাজাপুর থেকে আসা খলিলুর রহমান এবার ৪টি বিভিন্ন সাইজের ছুরি কিনেছেন। শহরের বাগরি বাজার থেকে। প্রতিদিনই এখানে দা-বটিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়। হাতে সময় না থাকার কারণে তিনি বাজার থেকে রেডিমেড কিনেই কাজ শেষ করবেন বলে জানান তিনি।


দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের ক্রেতা আব্দুল জলিল, মিন্টু মিয়া, জাকির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবার কামার সরঞ্জামাদির দাম একটু বেশি। তবুও এখন তো প্রয়োজন তাই একটু দাম বেশি হলেও এসব জিনিস কিনতে হচ্ছে। অনেকে আবার পুরাতন সরঞ্জামাদি মেরামত ও ধার দিচ্ছে। লোহার পাশাপাশি স্টিলের সরঞ্জামাদিও লোকজন কিনছেন।


কাঁঠালিয়া উপজেলার চেঁচরীরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের রবিউল ইসলাম জানালেন, কোরবানি দিতে বড় ছুরির অভাব পড়ে যায়। এছাড়া একটি ছুরি দিয়ে ৩ থেকে ৫টির বেশি জবাই দেয়া যায় না। ১৫ দিন আগেই কারাবারিয়া বাড়ি থেকে ৮০০ টাকা মজুরি দিয়ে ছুরি বানিয়েছেন।


একই গ্রামের কালাম মুন্সি ছোট দুটি চাকু কিনেছেন তালতলা বাজার থেকে। কালাম জানান, কোরবানির পর সারাবছর চাকুর তেমন কোনো কাজ না থাকায় ফের বছর আর আগের বছরের চাকু দিয়ে কাজ হয় না ঝংকার ধরে যায়। তাই বাধ্য হয়েই নতুন করে চাকু, দা, বটি কিনতে হয়।


তালতলা বাজারের কামার শিল্পী গোপাল কর্মকার জানালেন, পুরা বছরই যদি এমন কাজ থাকতো, তাহলে আমাদের আর অন্য কোনো কাজ করতে হতো না। কাজের অভাবে আদি কাল থেকে চলে আসা পূর্ব পুরুষদের এ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। কাজের অভাবে আমাদের অনেক সময় মাঠেও কৃষি কাজ করতে হয়। তাছাড়া এ পেশায় সরকার থেকে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতাও করে না। বাধ্য হয়েই আজ এ পেশা থেকে আমাদের অনেকে চলে গেছে।


বিবার্তা/আমিনুল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com