অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে গত ক’দিন ধরে বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩/৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং উপকূলীয় ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার বিষখালী নদী তীরবর্তী কাঁঠালিয়া অংশে টেকসই বাধ না থাকায় এ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানির তোড়ে কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট এলাকার ভেড়ি বাধের অনেকাংশ ভেঙ্গে নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে। বাধের বাকি অংশেও প্রকট আকারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তেই বাধের বাকি অংশ ভেঙ্গে পানি ঢুকে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও কাঁঠালিয়া বন্দরের বিভিন্ন মহল্লা প্লাবিত হওয়ার আশংকায় আতঙ্কে রয়েছেন অফিস ও আবাসিক পাড়াসহ বন্দরের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।
বাঁধ ভাঙন কবলিত স্থানের অতুল শীলসহ কয়েকটি পরিবার অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে বিষখালীর পেটে চলে গেছে শতশত একর ফসলী জমি, বাগান-বাড়ি ও স্থাপনা। ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন বহু পরিবার।
প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার জোয়ারের ন্যায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরের জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদ মাঠ, উপজেলা মৎস্য, সমবায়, আনসার ভিডিপি, সমাজ সেবা, বিআরডিবি, যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের সামনে, বারান্দা এমনকি অফিস রুমে পানি প্রবেশ করে। এতে দাফতরিক কর্মকাণ্ড চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অব্যাহত পানি বৃদ্ধি, নদী ও বাঁধ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ, আবাসিক পাড়া, কাঁঠালিয়া, সোনার বাংলা ও আওরাবুনিয়া লঞ্চঘাট, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (আমুয়া), আমুয়া ষ্টীমার ঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, চিংড়াখালী সিনিয়র মাদরাসা, চিংড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হেতালবুনিয়া দাখিল মাদরাসা, কচুয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা, পূর্ব কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোনার বাংলা, দড়ির চর ও রঘুয়ারচর এলাকার ৫টি ইটভাটা ও ৪টি বিদ্যালয়সহ ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আওরাবুনিয়া ও আউরা বাজারসহ বেশ কয়টি স্থাপনা।
লঞ্চ ইজারাদার মো. তুহিন সিকদার জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় অল্প জোয়ারে লঞ্চঘাটের একমাত্র সড়কটি পানিতে ডুবে যায়। এতে যাত্রীরা ঘাটে আসা-যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এবছর ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটের লঞ্চ সার্ভিস চালু হলেও যাত্রী সংকটে রয়েছে।
মফিজ উদ্দীন দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা খাইরুল আমিন ছগির জানান, উপজেলার আমুয়া থেকে জাঙ্গালিয়া পর্যন্ত বিষখালী তীরবর্তী এলাকায় রক্ষাবাঁধ না থাকার কারণে জোয়ারের পানিতে নদী পাড়ের গ্রামগুলো ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যায়। জান-মাল রক্ষার্থে বিষখালী নদীর পশ্চিম তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা অতি জরুরী।
জোয়ারে বৃদ্ধি পানি নামার আগেই পুনরায় জোয়ার হওয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা, বসত ভিটা, বাগান-বাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এতে পানি বন্ধী হয়ে পড়ে সহস্রাধিক পরিবার। সংকট দেখা দিয়েছে নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষের উপার্জন ও গো-খাদ্যের। জোয়ারের আগেই ছুটি দেয়া হচ্ছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকন্দ মোহম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে বেড়িবাঁধ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। বিষখালী নদীর কবল থেকে কাঁঠালিয়া উপজেলা রক্ষার্থে প্রত্যেক মাসিক সভায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয় পানি উন্নয়ন বোর্ডে বড় আকারের প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। দ্রুত বরাদ্ধের জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।
বিবার্তা/আমিনুল/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]