শিরোনাম
‘বৈধ স্থাপনা’ ভাঙচুরের প্রতিবাদে আন্দোলনে যাবেন শ্যামগঞ্জ এলাকার মানুষ
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০১৮, ২১:৫৬
‘বৈধ স্থাপনা’ ভাঙচুরের প্রতিবাদে আন্দোলনে যাবেন শ্যামগঞ্জ এলাকার মানুষ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন বৈধ স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনায় ক্রমেই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে শ্যামগঞ্জ এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ওই উচ্ছেদ অভিযানের সময় স্থানীয়দের হয়রানি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।


এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ভুক্তভোগীরা ইতোমধ্যে মানববন্ধনসহ সওজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ শ্যামগঞ্জ বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের।


তবে অভিযান পরিচালনাকারী সওজ’র এস্টেট ও ল কর্মকর্তা উপসচিব এ টি এম কামরুল ইসলাম তালুকদার এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলে দাবি করেছেন।


সূত্র জানায়, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কের শ্যামগঞ্জ বাজার এলাকায় সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ জুন থেকে ৪ জুলাই সাত দিনব্যাপী অভিযান চালানো হয়।


স্থানীয়দের দাবি, ওই স্থাপনাগুলোর মধ্যে বেশ কিছু স্থাপনার জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন। তাদের অভিযোগ, সওজ বিভাগ আগে থেকে কোনো রকম ঘোষণা না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে অবৈধ স্থাপনার পাশাপাশি বেশ কিছু বৈধ স্থাপনাও ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন- সড়ক ও জনপথ বিভাগের এস্টেট ও ল কর্মকর্তা উপসচিব এ টি এম কামরুল ইসলাম তালুকদার। ওই কর্মকর্তার নিজ গ্রামের বাড়ি শ্যামগঞ্জের পার্শ্ববর্তী কান্দুলিয়া গ্রামে। ব্যক্তিগত আক্রোশে তিনি বৈধ স্থাপনা ভেঙেছেন বলে ব্যবসায়ীদের দাবি।


এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৪ জুলাই কুমুদগঞ্জ এলাকায় ‘শ্যামগঞ্জ বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী’র ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য শারমিন জাহান, গোয়ালাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছায়েদ আলমামুন শহীদ ফকির, একই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসনাত জামান খোকন, ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা, বেলাল উদ্দিন খান পাঠান প্রমুখ।


এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম শনিবার জেলার সড়ক উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে নেত্রকোনা যাওয়ার পথে শ্যামগঞ্জ ও কুমুদগঞ্জ বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তার কাছে ভাঙচুরের চিত্র তুলে ধরেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষে একটি অভিযোগপত্র সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের হাতে তুলে দেয়া হয়।



শ্যামগঞ্জ বাজারের সুমিত মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক সুবল চন্দ্র রায় বলেন, উপসচিব কামরুল ইসলাম গত ২ জুলাই সড়কের পাশে আমার দোকানের সামনে ভূমি অধিগ্রহণ করা জায়গা ছাড়াও আমার মালিকানাধীন জায়গায় সীমানা পিলার স্থাপন করতে চাইলে আমি প্রতিবাদ করি। এতে তিনি ক্ষেপে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে আমার হাতে হাতকড়া লাগিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালাকালীন তার সঙ্গে ঘোরান।


এ ঘটনার একদিন পর প্রতিবাদ করায় আসাদুজ্জামান ডানু নামে আরো একজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাতকড়া পরিয়ে সারা দিন ঘোরায়।


আরেক ভুক্তভোগী বেলাল উদ্দিন খান পাঠান বলেন, সওজ’র নির্দিষ্ট জায়গা থেকে আমার বাসার ফটক অন্তত তিন ফুট দূরে ছিল। কামরুল ইসলাম সেটিও ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। আমি উনার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আমরা গত শনিবার সড়ক পরিবহন সচিব মো. নজরুল ইসলামকে জানিয়েছি।


এ ব্যাপারে সচিব নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


এদিকে সচিবের কাছে বাজারের ১১৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর স্বাক্ষরযুক্ত অভিযোগপত্র দেয়ার পর সড়ক ও জনপথ বিভাগের এস্টেট ও ল কর্মকর্তা উপসচিব এ টি এম কামরুল ইসলাম তালুকদার নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন।


বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, ইতোমধ্যে দেড়ফুট জায়গা থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আরো দেড়ফুট অর্থাৎ তিন ফুট জায়গা থেকে লোকজনকে উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।


এলাকাবাসী এসব ঘটনায় ক্রমেই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তাদের বক্তব্য, সওজ কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসন যদি অন্যায় উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারা আগামীতে আরো কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ’র এস্টেট ও ল কর্মকর্তা উপসচিব এ টি এম কামরুল ইসলাম তালুকদার বিবার্তাকে বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সেখানে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। আর মানববন্ধন করেছে বহিরাগতরা। সওজ’র দখল হয়ে যাওয়া নির্ধারিত দেড় ফুট জায়গা থেকেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি মালিকানার জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি।



তিনি আরো বলেন, এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। আমি ওই এলাকার মানুষ হলেও শ্যামগঞ্জ বাজারে আমার কোনো জায়গা-জমি নেই। কাজেই ব্যক্তিগত আক্রোশের কোনো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া এটি সওজ কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযান। সওজ’র এস্টেট ও ল কর্মকর্তা হিসেবে আমি সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।


বিবার্তা/রোকন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com