শিরোনাম
উত্তরবঙ্গে চরম বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০১৮, ১৪:০৫
উত্তরবঙ্গে চরম বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কা
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের একমাত্র কয়লা ভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের আট জেলায় চরম বিদুৎ সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডেও পড়ার আশংকা রয়েছে। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের কিছু জেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে। বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ ও ঘন ঘন লোড শেডিং দেখা দিয়েছে।


তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ ও খনি থেকে কয়লা চুরির ঘটনায় বুধবার বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিক-জনতা।


২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু করে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি। উৎপাদনের শুরু থেকে চলতি বছরের ২৭ জুন পর্যন্ত কয়লা উৎপাদন করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। এর মধ্যে সিস্টেম লস ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। যার পরিমাণ উধাও হয়ে যাওয়া কয়লার সমপরিমান অর্থাৎ প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। বলা হচ্ছে ১৩ বছরের এ ঘাটতি।


কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন সময়ের বাৎসরিক রিপোর্ট বলা হয়েছে ভিন্ন কথা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের রিপোর্টে মজুদ কয়লার পরিমাণ দেখানো হয়েছে, ৩৬ হাজার ২৮৬ মেট্রিক টন। এ সময় পর্যন্ত উত্তোলন দেখানো হয়েছে ৭০ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। খনি কর্তৃপক্ষের হিসাবে ৭০ লাখ ৫৮ হাজার টন কয়লা উৎপাদনে সিস্টেম লস ৩৬ হাজার টন।


২০১৫-২০১৬, ২০১৬-২০১৭ এবং ২০১৭-২০১৮ এই তিন অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩০ লাখ ৪১ হাজার টন কয়লা। এই পরিমাণ কয়লায় সিস্টেম লস ১ লাখ ৬ হাজার টন। যদি সাড়ে ৭০ লাখ টনে সিস্টেম লস ৩৬ হাজার হয়, তাহলে ৩০ লাখ ৪১ হাজার টনে সিস্টেম লস ১ লাখ ৬ হাজার হয় কীভাবে- এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খনি শ্রমিক ও স্থানীয় কয়েকজন কয়লা ব্যবসায়ী এবং এলাকাবাসী বলছেন বিষয়টি চুরি।


কয়লা খনির সে সিস্টেম তাতে করে কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া এক কেজি কয়লাও খনি থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। মার্কেটিং বিভাগ, হিসাব বিভাগ পার হয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনুমতি এরপর খনির নিরাপত্তা বিভাগের ছাড়পত্র পেলেই কেবলমাত্র কয়লা বাইরে বের হতে পারে। তাছাড়া ১ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে যেতে প্রায় ৭ হাজার ট্রাকের প্রয়োজন এবং এ জন্য প্রয়োজন অনেক সময়েরও। তবে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ ও খনি থেকে কয়লা চুরির ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিক-জনতা।



ইতোমধ্যে কয়লার সংকটে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদুৎ কেন্দ্রের বিদুৎ উৎপাদন বন্ধের প্রভাব পড়তে শুরু দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে। বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ ও ঘন ঘন লোড সেডিং দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের লোড সেডিং হবে তার সত্যতাও স্বীকার করেছে, বড়পুকুরিয়া তাপবিদুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাকিম সরকার।


এদিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে ১লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা গায়েব কেলেঙ্কারির ঘটনায় খনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদসহ ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টায় পার্বতীপুর মডেল থানায় দুর্নীতি দমন আইনের ৫ (২) এবং ৪০৯ ধারায় ওই মামলা দায়ের করেছেন খনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিছুর রহমান।



মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইমিগ্রেশন পুলিশকে লেখা এক চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় খনির কয়লা উধাও হওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাবিব খুরশিদ আহমেদসহ ৪ কর্মকর্তাকে বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদকের পরিচালক (গণসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


বিবার্তা/শাহী/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com