শিরোনাম
সৌদি খেজুর চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা গাজীপুরে
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ১৭:০৫
সৌদি খেজুর চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা গাজীপুরে
তুহিন মোল্লা, গাজীপুর
প্রিন্ট অ-অ+

দেশে বর্তমানে খেজুরের বেশ বড় একটি বাজার রয়েছে। দিন দিন এ চাহিদা বেড়েই চলেছে। আর এ চাহিদার শতভাগই পূরণ করতে হচ্ছে আমদানির মধ্য দিয়ে। তবে দেশের আবহাওয়াতেও যে উন্নত জাতের খেজুর চাষ সম্ভব, তা কয়েক বছর আগেই প্রমাণ করেছেন আমাদের দেশের কয়েকজন চাষী। আর তাই অনেকেই উৎসাহী হয়ে নতুন নতুন খেজুর বাগান গড়ে তুলছেন। খেজুর চাষাবাদ লাভজনক হবার কারণে চাষীরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন খেজুর চাষাবাদে।


গাজীপুরের পিরুজালী ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমানের একমাত্র ছেলে নজরুল ইসলাম বাদল খেজুর চাষাবাদকে আরো একধাপ উপরে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি বাগানের পাশাপাশি খেজুর চারা তৈরির নার্সারী করেছেন। যেখানে চারা বিক্রির সাথে সাথে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। যারা খেজুর চাষাবাদে আগ্রহী তাদের কাছে চারা বিক্রির সাথে সাথে প্রশিক্ষণ দিয়ে দিচ্ছেন কিভাবে চারা রোপন এবং তার পরিচর্যা করতে হবে।


‘সৌদি ডেট পাম ট্রিস ইন বাংলাদেশ’ নামক নার্সারিটি নজরুল গড়েছেন শুধু চারা বিক্রির জন্যে নয়, মানুষ যেন খেজুর বাগান করার নিয়ম সর্ম্পকে জানতে পারে সে কথা মাথায় রেখে।


২০১৪ সালের শেষের দিকে স্বল্প পরিসরে নিজের জমিতে নজরুল গড়ে তুলেছিলেন ছোট এ খেজুর বাগান। সৌদি থেকে বেশ দাম দিয়ে আমদানি করা চারা দিয়ে তার খেজুর বাগানের যাত্রা শুরু। কয়েক বছরে যা আয়তনে কয়েকগুণ বেড়েছে। বর্তমানে তার বাগানে ১০০টির মতো খেজুর গাছ আছে। সেই সাথে ৬ হাজার চারা রোপনের উপযোগী, যা পলি ব্যাগে লাগানো আছে। বছর কয়েকটি গাছে ফলন আসাতে নজরুল তার ২.৫ একর জমির পুরোটাই তৈরি করছেন খেজুর চাষের জন্যে।


প্রথম বছর পাওয়া খেজুরের স্বাদ এবং মান দুটোই ছিল অবাক করার মতো। ভাল আকারে খেজুর হয়েছিল গাছগুলোতে। তার মতে গাছের পরিপক্কতা বাড়ার সাথে সাথে ফলন বাড়বে। তিনি জানান, যতটা আশা করিছেলন তার চেয়ে অনেক বেশি ভাল মানের গাছ হয়েছে তার বাগানটিতে। আর তাই দিন দিন ফলন আরো ভাল হবে বলে তিনি মনে করছেন।


বাজার সম্প্রাসারণের বিষয়ে তার সাথে কথা হলে তিনি আমাদের জানান, তার হাত দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলাতে খেজুর গাছের বাগান সৃষ্টি হচ্ছে। যেসব গাছ রোপন করা হয়েছে তার বৃদ্ধিও ভাল। আর তাই তিনি ভাল ফলনের বিষয়েও আশাবাদী। তিনি মনে করেন সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে ভাল ফলন আসবেই। তার মতে বাংলাদেশের আবহাওয়া যে খেজুর চাষের জন্য উপযোগী তা দেশি খেজুর গাছই প্রমাণ করে। আর সৌদির জাতগুলোকে একটু আলাদা ভাবে যত্ন নিলে ভাল ফলন আসে তা আমরা ইতিমধ্যে প্রমাণ করতে পেরেছি।


বাদলের মতে বাংলাদেশে যে মানের খেজুর আমরা পেয়ে থাকি তা ‘সি’ গ্রেডের। আর এ গ্রেডের খেজুর যা আসে তার দাম অনেক বেশি। যা সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে খেজুরের বিশাল বড় একটা বাজার রয়েছে। যদি প্রতিটি জেলাতে পরিকল্পিতভাবে বাগান গড়ে তোলা যায় তাহলে যে ফলন আসবে তাতে করে আগামী দশ বছর পর খেজুর আমাদানি হয়তো শূন্যের কোটায় চলে আসবে।


যদি কেউ খেজুর চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে তিনি কিভাবে সাহায্যে করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাগান করার পাশাপাশি আমি খেজুর চারা উৎপাদনে নার্সারী করেছি। বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত চারা সংগ্রহ করে তা থেকে টিস্যু পদ্ধতিতে চারা তৈরি করছি। তিনি জানান, তার নার্সারীতে বর্তমানে রোপনের উপযোগী ছয় হাজার চারা আছে। যা সঠিক নিয়মে রোপন করে যত্ন নিলে আগামী ৫/৬ বছরের মধ্যে ফলন আসবে।



তাছাড়া তিনি ব্যক্তিগতভাবে যারা তার বাগান থেকে চারা নিয়ে বাগান তৈরি করেছেন তাদের বাগান পরিদর্শনে যান এবং তাদের বাগান বিষয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করে দেন। খেজুরের চাষ পদ্ধতি তিনি কিভাবে রপ্ত করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান দীর্ঘদিন সৌদিতে বেশ বড় খেজুর বাগানের দেখাশোনা করতেন। সেখানে কাজ করার সুবাদে খেজুরের চাষ সর্ম্পকে অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এক যুগেরও বেশি সময় খেজুরের চাষ পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে এ বিষয়ে তার দক্ষতা অনেক বেশি। খেজুর চাষের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলে তার বাবাই তাকে উৎসাহ দেন এবং প্রথমে বাবার কাছ থেকে এবং জ্ঞানেন্দ্র নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করেন। জমি তৈরি থেকে শুরু করে বাগান তৈরি পুরো বিষয়টিতে তার অভিজ্ঞতার ছোয়া দেখা গেছে।


নতুন চাষীদের বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু বাজারে চাহিদা ভাল তাই খেজুর চাষ করে সবাই লাভবান হতে পারেন। যেহেতু খেজুর গাছ ১০০ বছরের বেশি সময় ফলন দেয় তাই পরবর্তী খরচও কম। গাছের পরিচর্যাতে সম্পন্ন জৈব সার এবং গোবর ব্যবহার কারণে খরচের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আয় হয় খেজুর চাষে।


তার ভবিষৎ পরিকল্পনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জানান, কৃষকদের উৎসাহিত করে আগামী কয়েক বছরে দেশের প্রতিটি জেলাতে খেজুরের বাগান তৈরি করবেন তিনি। তার স্বপ্ন দেশীয় খেজুরে আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশের চাহিদা পূরণ করবেন।


তবে ইতিমধ্যেই অনেকের দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছেন নজরুল ইসলাম বাদল। কারণ তার বাড়িতে খেজুর গাছের পাশাপাশি ১২০ টির মতো লটকন গাছ আছে যার প্রতিটি গাছে কয়েক মন লটকন ফলন আসে। তাছাড়া ড্রাগন ফল, মালটার বাগানেও ফলন আসতে শুরু করেছে। যা দেখতে আশেপাশের অনেক মানুষ তার বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করেন।


১৮ সেপ্টেম্বর কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান সরেজমিনে নজরুলের খেজুর বাগানটি পরিদর্শন করে গেছেন। বাগান পরিদর্শনে এসে তিনি অনেকটা সময় অবস্থান করেন বাগানটিতে। বাগানে চারার ধরণ এবং সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তিনি ভাল ফলনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই সাথে নজরুল ইসলামের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান।


খেজুর বাগান সর্ম্পকিত যেকোন সহযোগিতার জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন নজরুল ইসলামের সাথে (০১৯৮৮৬৬৮৮৯৯)।


বিবার্তা/তুহিন/পলাশ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com