শিরোনাম
লক্ষ্মীপুরে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৮, ০৯:১০
লক্ষ্মীপুরে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘লতাপাতা আর আবর্জনার স্তূপে কোনটির হেডলাইট, আবার কোনটির ব্রেক-শো, কোনটির বা বেকলাইট দেখা যাচ্ছে-এ যানবাহনগুলোর সবই বিভিন্ন অপরাধে জব্দকৃত মামলার আলামত। লক্ষ্মীপুরের পুলিশ লাইন্স, থানায় ও আদালত পাড়ায় সরকারি মালখানায় বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে এভাবেই রাখা হয়েছে প্রায় দুই হাজারের বেশি যানবাহন। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত।


যানবাহনগুলোর মধ্যে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি। তবে এসব যানবাহন সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের! অন্যদিকে আইনি জটিলতার কারণে নিলাম না হওয়ায়, কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার বলে দাবী স্থানীয়দের।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ২টি মালখানায় জব্দকৃত যানবাহন রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ৫টি থানায় রাখা হচ্ছে জব্দকৃত মোটরসাইকেল। বিভিন্ন অপরাধে জব্দকৃত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২ হাজারেও বেশি। এদের মধ্যে মামলার আলামত, চোরাইকৃত যানবাহন ও কাগজপত্র বিহীন যানবাহন মোট তিন স্তরের রয়েছে। আইনি জটিলতার কারণে অনেক মালিকই ছাড়িয়ে নিতে পারেন না সেসব গাড়ি। তাই দিনের পর দিন এভাবে জমছে গাড়ির স্তূপ। আবার আইনি জটিলতার করণেও ওয়াকসন দেয়া যাচ্ছে না।



সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ অফিসের সামনে আদালত পাড়ায় ও পুলিশ লাইন্সের ভিতরে সরকারি মালখানায়, ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জব্দকৃত যানবাহন ও মামলার আলামত। দুই চাকার মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে প্রাইভেটকার এবং সিএনজিও আছে এখানে। স্থান সংকটের কারণে এসব আলামত (যানবাহন) খোলা স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। স্তূপে রাখা গাড়িগুলোর মধ্যে নামী-দামী ব্যান্ডের গাড়িও রয়েছে। তবে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলার আস্তরণে বোঝার উপায় নেই কোনটা সচল আর কোনটা অচল।


সরকারি মালখানায় বছরের পর বছর অযত্নে পড়ে থাকায় কিছু গাড়ির কাঠামো বা চ্যাসিস ছাড়া অবশিষ্ট নেই কিছুই। নিরাপত্তার অভাবে যানবাহনগুলোর বিভিন্ন পার্সও চুরি হয়ে যাচ্ছে। স্থান সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত।


আবদুল মালেক নিরব নামে সদর উপজেলার এক বাসিন্দা জানান, আইনি জটিলতার কারণে এসব গাড়ি সরকারি মালখানায় বছরের পর বছর নষ্ট হচ্ছে। গাড়ি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের, ফলে খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে গাড়িগুলো। জব্দকৃত গাড়িগুলোর মামলা নিষ্পত্তি করে নিলামে দেয়া হলে সরকারের প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হতো।


জেলার অন্য এক বাসিন্দা মো. ফয়সাল বলেন, জব্দকৃত গাড়িগুলো বিক্ষিপ্তভাবে না রেখে এক যায়গায় সেডের নিচে রাখলে দীর্ঘসময়েও নষ্ট হবে না। অন্যথায় আদালতে প্রমাণ স্বরূপ মামলার আলামত হাজির করতে না পারলে প্রকৃত অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাবে।



এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান হাসিব বলেন, বিচারিক কার্যক্রম সমাপ্ত হতে বিলম্ব হওয়ায় গাড়িগুলো নিলামে ও মালিকদের নিকট হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাড়িগুলো। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাড়ির মালিক ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র।


জেলা মালখানার ইনচার্জ মোহাম্মদ গফফার খান বলেন, জব্দকৃত গাড়িগুলোর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় নিলামে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই দীর্ঘদিন রোধ-বৃষ্টির মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে গাড়িগুলো।


পুলিশ সুপার আসম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন অপরাধে এসব যানবাহন জব্দ করা হয়েছে। কাগজ-পত্র না থাকায় সঠিক মালিকের কাছেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন বলে তিনিও মনে করেন। কিন্তু জায়গা সংকুলানের জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।


জেলা বিআরটিএ সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, এসব জব্দকৃত যানবাহন আইনি প্রক্রিয়ার পর ইন্সপেকশন চাওয়া হয়। ওই ক্ষেত্রে জব্দকৃত যানবাহন রেজিষ্টেশনের যোগ্য না হলে নিলামে বিক্রি করা হয়। কিন্তু এর আগেই আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। তাই যানবাহনগুলো রেজিষ্টেশনের যোগ্যতা হারিয়ে পেলে।


বিবার্তা/ফরহাদ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com