বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সিনিয়র ক্যামেরাম্যান আলতাফ হোসেনের মরদেহ দাফনের ৪ বছর ৩ মাস পরে কবর থেকে কঙ্কাল তোলা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশে রাজাপুর উপজেলার কানুদাসকাঠি পারিবারিক গোরস্থান থেকে সোমবার তার কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়।
দুপুর ২টায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে কঙ্কাল উত্তোলনের সময় উপস্থিত ছিলেন রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান, অফিসার ইন চার্জ (প্রশাসন) শামসুল আরেফিন, ওসি (তদন্ত) হারুন অর রশিদ।
আলতাফ হোসেনের স্ত্রী ছবি আক্তার সাবিনা হত্যার ঘটনার ৩ বছর ৭ মাস পরে ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে নালিশি অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রাজাপুর থানার ওসিকে এজাহার রেকর্ডের নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী ছবি আক্তার সাবিনা উল্লেখ করেন, রাজাপুর উপজেলার কানুদাসকাঠি গ্রামের মৃত. তাছেন উদ্দিনের ছেলে বিটিভি ক্যামেরাম্যান আলতাফ হোসেনের সাথে ২০১১ সালের ২৭ জুলাই তার বিয়ে হয়। তাদের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
স্থানীয় জাহিদুল ইসলাম লিটন ওরফে সাদু হাওলাদার (৪০), রেজোয়ান হাওলাদার (৪২), মুজাম্মেল হাওলাদার (৪৫), সিদ্দিকুর রহমান (৪৮) এদের সাথে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিলো আলতাফের।
ক্যামেরাম্যান আলতাফ হোসেনের দুটি বিবাহের কারণে প্রথম সংসারে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তান রয়েছে। প্রথম সংসারের মেয়ে লাইজু আক্তারের সাথে জাহিদুল ইসলাম লিটনের অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। এই সুযোগে জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে উল্লিখিতরা আলতাফকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঢাকার বাসায় পরিকল্পনার কথা টের পেয়ে রাজাপুরের কানুদাসকাঠি গ্রামের পৈত্রিক বাড়ি এসে ওঠেন আলতাফ।
২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে একটি সাদা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে উল্লিখিতরা আলতাফকে অসুস্থতার কথা বলে তার প্রথম সংসারের স্ত্রী ও সন্তানেরা পাশের কাটাখালী বাজারে আছে বলে জানায়। তারা বাড়িতে আসবে না, আপনি আমাদের সাথে চলেন বলে ধরাধরি করে ভ্যান গাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আলতাফের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
ওই বছরের ৬ মার্চ জাহিদুল ইসলাম আলতাফের ২য় স্ত্রী ছবি আক্তার সাবিনার কাছে জানায়, আলতাফ বয়স্ক মানুষ, কত দিন আর বাঁচবে। এরমধ্যে আবার একটি সন্তানও নিলি। এখন তোর কী হবে। জমি-জমা সব তো আমাদের লিখে দিয়েছে। পরের দিন অর্থাৎ ৭ জুলাই আলতাফকে মৃতাবস্থায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে তারা। মাইকিং করে বিকেলে জানাজা ও দাফনের কথা বললেও সকাল ৮টায় নিয়ে এসে ৯ টার মধ্যেই তাড়াহুড়া করে তাকে দাফন করা হয়।
আসামিরা কৌশলে প্রথম স্ত্রীর সাথে যোগ সাজসে ব্যাংকে জমানো টাকা ও জমি আত্মসাত করে। গত রবিবার আদালতে বিষয়টি জানানোর পর পর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সেলিম রেজা আলতাফ হোসেনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী ছবি আক্তার সাবিনা জানান, আমার স্বামীকে হত্যার পর থেকে আমাকে ও আমার সন্তানকে নানাভাবে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে আসামিরা। আমরা তাকের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারছি না।
বাদীর পিতা বেলায়েত হোসেন জানান, জামাইকে হত্যার পর আমাদেরকে সপরিবারে উৎখাতের চেষ্টা, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারি না। কয়েকদনি আগে দুটি ছাগলকেও মেরে ফেলেছে তারা। আমাদের জীবন যে কোনো সময় আসামিদের হাতে শেষ হয়ে যেতে পারে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
রাজাপুর থানার ওসি শামসুল আরেফিন জানান, আদালতের নির্দেশে কবর থেকে কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়েছে। দাফনের ৪ বছর ৩ মাস পরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কিছু হাড্ডি এবং মাথার খুলি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি।
রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আসাদুজ্জামান জানান, আদালতের নির্দেশে কবর খুড়ে কিছু হাড্ডি ও মাথার খুলি পাওয়া গেছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য মহাখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হবে।
বিবার্তা/আমিনুল/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]