শিরোনাম
চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে স্বপ্নের কালনা সেতু নির্মাণ কাজ
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৮, ১৪:১৫
চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে স্বপ্নের কালনা সেতু নির্মাণ কাজ
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নড়াইলবাসীর স্বপ্নের কালনা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে এ মাসেই। স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের। সেতুটি না থাকায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হত।


এই সেতু চালু হলে মধুমতি নদীর উভয় পাড়ের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে, কমবে দুর্ভোগ।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে গোটা বরিশাল বিভাগ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের আরো কয়েকটি জেলার মানুষ সুফল পাবেন। ঢাকা থেকে এই সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঢুকতে হলে মধুমতি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ছিল জরুরি।


কালনা ঘাটে সেতু ছিল এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বেই নড়াইল সফরে এসে এখানে সেতু নির্মার্ণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তী মেয়াদে সরকার গঠন করে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সেতুটির ডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।


২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ-নড়াইলের মাঝখানে মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্প অনুমোদন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পরও নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন কাজ আটকে ছিল।


সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকি করবেন জাইকা অনুমোদিত আরেকটি কনসালটেন্ট কোম্পানি ‘দি ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল লিঃ (ওসিজি)’। চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে।


‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-লিংক কালনা’ প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান হাইওয়ে-১ নামে পরিচিত মহাসড়কের এই সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার; প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং কম গতির যানবাহনের জন্য দুইপাশে দুই লেনসহ ছয় লেনের এই সেতু নির্মাণের জন্য মোট খরচ ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা।


বিলম্বের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প গ্রহণের সময় এ সেতুর সঙ্গে রেললাইন সংযোজনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। পরে একই সেতুর ওপর দিয়ে রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।



গত ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালনা সেতু এলাকা পরিদর্শনে এসে জানান, কালনা সেতুর সাথে রেললাইন সংযোজনের চিন্তা করা হচ্ছে। কিন্তু পরে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া প্রকল্প অনুমোদনের সময় চার লেনের সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল। সে অনুসারে সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা ছিল জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার। কিন্তু চার লেন সেতুর পরিবর্তে ছয় লেন সেতু নির্মাণের বাড়তি অর্থ দিতে জাইকা দেরি করে বলে জানা গেছে।


জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সরদার আলমগীর হোসেন আলম জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা দূরত্ব অনেক কমবে। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের খরচও কমে যাবে অনেকাংশে। এক্ষেত্রে বেনাপোল থেকে কালনা সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে প্রায় ২০১ কিলোমিটার, যশোর থেকে ঢাকা ১৬১ কিলোমিটার, নড়াইল থেকে ১২০ কিলোমিটার এবং খুলনা থেকে বসুন্দিয়া-ধলগাঁ-কালনা সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৯০ কিলোমিটার।


অথচ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে এসব এলাকা থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৫০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা সহজ হবে।


‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের’ প্রকল্প পরিচালক কে এম আতিকুল হক জানান, কালনা সেতু মেসার্স আবদুল মোনেম লি. ও জাইকার অনুমোদিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান টেককেন করপোরেশন ওয়াইবিসি লি. যৌথভাবে গত ২৪ জুন সেতু নির্মাণ কাজের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর ফলে নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরনে আরো একধাপ এগিয়ে গেল।


তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী হবে নড়াইলের কালনা সেতু। ইতিমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োজিত ঠিকাদারকে ৩৬ মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


বিবার্তা/শরিফুল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com