সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে টাঙ্গাইল ও যশোরে আরো দুইজন গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে একজন, বগুড়ায় একজন আর যশোরের চৌগাছায় এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে পুলিশ বলেছে, তার লাশের পাশে ইয়াবার প্যাকেট ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মে মাসে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর প্রায় প্রতি রাতেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে ‘মাদক বিক্রেতাদের’ নিহত হওয়ার খবর দিয়ে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ধরনের ঘটনায় গত দুই মাসে প্রায় দুইশ মানুষের মৃত্য হয়েছে।
টাঙ্গাইলে র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আফজাল হোসেন (২৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বেগুনটাল এলাকায় গোলাগুলির ওই ঘটনা ঘটে বলে টাঙ্গাইল র্যাব-১২ এর উপ-পরিচালক মেজর মোহাম্মদ রবিউল ইসলামের ভাষ্য।
তিনি বলেন, ‘আফজাল ছিল পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনের একাধিক মামলা রয়েছে।”
ঘটনার বিবরণে মেজর রবিউল বলেন, মাদক বিক্রেতারা একটি চালান ভাগাভাগি করছে খবর পেয়ে ভোরে র্যাব সদস্যরা বেগুনটালে অভিযানে যায়।
“র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছোড়ে। এসময় আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি করে। গোলাগুলির পর আফজালকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সেখানে পাওয়া যায়।”
তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
তিনি বলছেন, এই অভিযানে র্যাবের দুই সদস্যও আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ২০০ বোতল ফেনসিডিল এবং ১০৪২টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
যশোর
যশোরের চৌগাছায় রতন (২৭) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ বলেছে, দুই দল সন্ত্রাসীর গোলাগুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে চৌগাছা-যশোর সড়কের কয়ারপাড়া এলাকা থেকে রতনের লাশ উদ্ধারের সময় সেখানে অস্ত্র ও মাদক পাওয়া গেছে বলে চৌগাছা থানার ওসি খোন্দকার শামিম উদ্দিনের ভাষ্য।
নিহত রতন উপজেলার দীঘলসিংগা গ্রামের আবু বাক্কারের ছেলে। পরিবার বলছে, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে রতনের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না তারা।
রতনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কিনা- তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি চৌগাছা থানার ওসি।
তিনি বলেন, গভীর রাতে কয়ারপাড়া এলাকায় ‘সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির’ খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়।
“পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে সেখানে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ, একটি ওয়ান শুটারগান, এক রাউন্ড গুলি ও এক প্যাকেট ইয়াবা পড়ে থাকতে দেখা যায়।”
পরে পুলিশ লাশটি যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় বলে জানান ওসি।
এদিকে রতনের বাবা আবু বাক্কার বলেন, তার ছেলে বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে ‘পাওনা টাকা’ আনতে যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যার পরও না ফেরায় তারা ফোন করেন। কিন্তু রতন ফোন না ধরায় আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
“আজ ভোরবেলা আমাদের একজন পরিচিত লোক যশোর সদর হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানায়, হাসপাতালে রতনের মত দেখতে একজনের লাশ রয়েছে।”
ওই খবর পেয়ে মর্গে গিয়ে রতনের লাশ শনাক্ত করেন বাক্কার ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগম।
বগুড়া
বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছে। নিহত পুতু মিয়া একজন মাদক বিক্রেতা বলে অভিযোগ করছে পুলিশ। পুতু শহরের চকসূত্রাপুরের মজিবর রহমানের ছেলে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে শহরের ভাটকান্দি ব্রিজের পূর্ব মাথায় দুই দল দুষ্কৃতিকারীর মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের সাথে এ বন্দুকযুদ্ধ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ওয়ান শুটার গান, পাইপ গান, আট রাউন্ড গুলি ও পাঁচশ’পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
জেলার মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ভাটকান্দী ব্রিজের পূর্ব মাথায় দুই দল দুষ্কৃতিকারী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, খবর পেয়ে শহরের বনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তারিকুলের নেতৃত্বে সদর থানার একদল পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতিকারীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকলে তারা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে থেকে একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, নিহত পুতুর বিরুদ্ধে বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ থানায় পাঁচটি মাদক মামলা রয়েছে। সে জেলার তালিকাভুক্ত একজন শীর্ষ মাদক বিক্রেতা।
বিবার্তা/তোফাজ্জল/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]