শিরোনাম
খাল-বিলের দেশীয় মাছ রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০১৮, ১২:৪৩
খাল-বিলের দেশীয় মাছ রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ
শিমুল খান, গোপালগঞ্জ
প্রিন্ট অ-অ+

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলাকে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধির অভায়শ্রমে পরিণত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।


‘উপজেলার কোনো খালে বিলে বা কোনো সরকারি জলাশয়ে কোনো প্রকারের চরপাটা, বাঁধ, ভেসাল জাল, কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা যাবে না কিংবা দেশে প্রচলিত কোনো আইনের লঙ্ঘন করে মাছ শিকার করা যাবে না। যদি কেউ এ আদেশ বা পরামর্শ অমান্য করে বেআইনিভাবে মাছ শিকার করে তবে কোটালীপাড়ার খালে বিলে দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জনস্বার্থে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।’


এমন একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান। এ গণবিজ্ঞপ্তিটি ব্যাপক প্রচারের জন্যও তিনি সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।


দেশজ মাছ রক্ষার্থে এ ধরণের গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার অভিজ্ঞমহল। সেই সঙ্গে প্রকৃত মৎস্যজীবীরাও এতে খুশি হয়েছেন। কেননা এক শ্রেণীর লোকজন খালে বা বিলে চরপাটা, ভেসাল জাল ও কারেন্ট জালের সাহায্যে মাছের পোনা, বিশেষ করে মাছ বড় হবার আগেই ছোট অবস্থায় ধরে বিক্রি করছে অথবা খাচ্ছে। এতে এলাকায় মাছের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। আর তাই দিন দিন এলাকা থেকে দেশীয় মাছ বিলুপ্তর পথে।


অথচ খাল-বিলে ভরা কোটালীপাড়া উপজেলায় এক সময় দেশীয় মাছের ভান্ডার ছিল। কিন্তু কারেন্ট জাল, ভেসাল জালসহ অবৈধ উপায়ে মাছ ধরে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আর এ কারণে বাজারে দেশীয় মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। দেশীয় মাছের স্থলে এখন পুকুরে বা ঘেরে চাষ করা বিভিন্ন মাছে বাজার ভরে গেছে।


মৎস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত গোপালগঞ্জের বিভিন্ন বিল থেকে দেশীয় মাছ প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে কই, শিং, সরপুটি, বোয়ালসহ নানা জাতীয় দেশীয় মাছ। গোপালগঞ্জে ১১৪টি বিল রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল ও পুকুর। যেখানে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় দেশীয় মাছ। স্বাদের কারণে এখানকার উৎপাদিত দেশীয় মাছের সুনাম রয়েছে সর্বত্র। এ জেলায় উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়েও ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হতো। জেলার অধিবাসীদের মধ্যে বড় একটা অংশ মৎস্যজীবী।


টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বন্যাবাড়ি মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি ওহিদ শেখ জানান, বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছের প্রজনন এলাকা ও তাদের জন্য অভায়শ্রম গড়ে তোলার জন্য ২০০০ সালে টুঙ্গিপাড়ার বেন্নাবাড়ি মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছে এখানকার মৎস্য সমবায় সমিতি। সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই এই অভয়াশ্রমটিতে দেশীয় মাছের প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার সুফল এখানকার মানুষ পাচ্ছেন।


গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক বছর আগে জেলার বিভিন্ন স্থানে ২২টি মৎস্য অভায়শ্রম গড়ে তুলেছিল। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে তা আর ধরে রাখা যায়নি। যে স্বল্প পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা দিয়ে জেলার ৫ উপজেলায় পাঁচটি মাছের অভয়াশ্রম চালু রাখা গেছে।


তবে বরাদ্দের অভাবে যেসব অভয়াশ্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেখানে অর্থ বরাদ্দ করলে দেশীয় মাছের প্রাপ্যতা বাড়বে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া দেশজ মাছ রক্ষার্থে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনও রয়েছে।


এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান জানান, মাছের পোনা যাতে ভেসাল জাল, চরপাটা কিংবা কারেন্ট জাল দিয়ে শিকার করতে না পারে সে জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। খালে বিলে মৎস্যজীবীরা অবলীলায় মাছ ধরতে পারবে। কিন্তু কেউ যাতে মাছের পোনা বড় হবার আগেই ধরতে না পারে সে জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কোটালীপাড়ার সর্বত্র ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।


তিনি বলেন, সবাইকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে সচেতন করার কাজও চলছে। সবাই যদি সচেতন হয় তাহলে এ এলাকায় প্রচুর দেশজ মাছ পাওয়া সম্ভব হবে।


বিবার্তা/শিমুল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com