শিরোনাম
আইরিনের স্বপ্ন এখন সেরা জয়িতা হওয়া
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৮, ১৫:১৪
আইরিনের স্বপ্ন এখন সেরা জয়িতা হওয়া
ফরহাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর
প্রিন্ট অ-অ+

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বঞ্চানগর গ্রামের আলী আকবর ও সামছুন নাহারের মেয়ে আইরিন সুলতানা। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট আইরিন। তার শৈশব থেকেই প্রবল ইচ্ছা ছিল নিজেকে নিজেই প্রতিষ্ঠিত করার। অবহেলিত নারী সমাজকে এগিয়ে নেয়ার।


তাইতো আইরিন পড়ালেখার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাবা মারা যাবার পর চালিয়েছেন নিজের পড়ালেখা। শেষ করেছেন শহরের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং।


তিনি তার নিজের জমানো, পারিবারিক ও ঋণের টাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন আইরিন কম্পিউটার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার। তারপর থেকে বেকারদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে অদম্য সাহস, সততা আর আপন কর্মের মাধ্যমে সফল হতে থাকেন আইরিন। অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেন স্থানীয়দের মাঝে।


সফলতার খেতাব স্বরূপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সেরাসহ স্থানীয় পর্যায়ে পেয়েছেন বেশ কয়েকবার সম্মাননা ও অসংখ্যা পুরস্কার। তবে তিনি সফল হয়েছেন, পরিবার, স্বামী, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের সহযোগীতা-পরামর্শ ও নিজের একান্ত চেষ্টায়।


আইরিন লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, লক্ষ্মীপুর শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইনঞ্জিনিয়ারিং কম্পিউটার বিভাগ থেকে পাস করেন। তিনি লক্ষ্মীপুর যুব উন্নয়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, স্থানীয় ও ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোসিং, অটোক্যাড, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ইলেকট্রনিক্স, মাছ ও সবজি চাষ, বনায়ন, হাঁস-মুরগি পালনসহ প্রায় ২০টি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ঢাকার সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে ইলেক্ট্রিকালে বিএইচসি ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ¯স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।



ডিপ্লোমা শেষ করে আইরিন ঋণ নিয়ে একটি কম্পিউটার কিনে বাসায় মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেন। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন দোকানের অর্ডারকৃত জামা-কাঁথা সেলাই ও নকশি করতেন। ২০১১ সালে সদর উপজেলার চরশাহী ইউনিয়নের শাহজাহান ভূইয়ার পুত্র মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তখনো থেমে যাননি তিনি, স্বপ্ন পূরণের জন্য ও আত্মনির্ভরশীল নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর নিজের জমানো ও পরিবারের মূলধন দিয়ে শহরের ঝুমুরের মজু মার্কেটে স্থাপিত করেন আইরিন কম্পিউটার এন্ড ট্রেনিং সেন্টার।


মেয়েদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শুরু করলেও বর্তমানে ছেলেমেয়ে উভয়কে আলাদাভাবে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও কম্পিউটারের মাধ্যমে ট্রেনিং প্রদান করে থাকেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল নারীদের, গরীব-মেধাবীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টিতে ও সবাইকে গাছ এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করেন।


লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ২০১৭ সালে আইরিন টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (৬৭০৩৬) নামে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে স্বল্পমেয়াদি বেসিক ৩৬০ ঘন্টা অফিস এপ্লিকেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া, হার্ডওয়্যার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং কোর্সের অনুমোদন পায়। এছাড়াও আউট সোর্সিংসহ আরো পাঁচটি ট্রেডে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। প্রতিষ্ঠানে আগত প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন।


আইরিনের এই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১২ সালে ৫০, ২০১৩ সালে ৮০, ২০১৪ সালে ১৮২, ২০১৫ সালে ২২৭, ২০১৬ সালে ২১৭, ২০১৭ সালে ২৫০, জুন ২০১৮ পর্যন্ত ২০০ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। তাদের মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ১৪, সহ-পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ৫, গ্যাস অফিস এক, জেলা পরিষদের উদ্দ্যাক্তা দুই, জেলা শিক্ষা অফিসে একজনসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন শতাধিক নারী-পুরুষ। এছাড়া কেউ কেউ নিজেই প্রতিষ্ঠান খুলে অন্যজনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে।



সফলতার বিষয়ে আলাপকালে আইরিন সুলতানা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চাকরি করবো না, চাকরি দেবো’ সে কথাটিকে নিজের মধ্যে লালন করেই আজ সফল হয়েছি। সফলতার পুরস্কার স্বরূপ পেয়েছি বিভাগীয় সেরাসহ স্থানীয় বিভিন্ন সম্মাননা। এখন স্বপ্ন জাতীয় পর্যায়ে সেরা জয়িতা নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করা। আর সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।


তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য এখনো পর্যন্ত পাননি সরকারি কোনো সহযোগিতা। যদি পেতেন তাহলে এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বহু নারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন।


এছাড়া তিনি পূর্বে শিক্ষিতদের নিয়ে কাজ করলেও, ভবিষ্যতে সমাজের অস্বচ্ছল, নিরক্ষর, স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।


বিবার্তা/ফরহাদ/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com