শিরোনাম
‘নেশা স্বপ্ন দেখায় না, স্বপ্নের মৃত্যু ঘটায়’
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০১৮, ১৮:৩১
‘নেশা স্বপ্ন দেখায় না, স্বপ্নের মৃত্যু ঘটায়’
যশোর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার বিভাগে ৯ম সেমিস্টারে লেখাপড়া করতেন সাতক্ষীরার নিয়াজ মাহমুদ। কৌতুহলবশত মাদক সেবন করতে গিয়ে নেশায় জড়িয়ে আর পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি।


জীবনের সব স্বপ্ন যেন থেমে গেছে তার। কিন্তু পুনরায় আশায় বুক বাঁধছেন এই যুবক। যশোরস্থ ঢাকা আহছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (আমিক) চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। জীবনকে আবারো নতুনভাবে গড়তে চান নিয়াজ মাহমুদ। নিয়াজের মতো অসংখ্য মেধাবী মাদকের নেশায় পড়ে জীবন ও সংসারকে ধ্বংসের মুখে ঢেলে দিয়েছেন।


মঙ্গলবার রাতে আহছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুর্নবাসন কেন্দ্র যশোরের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রিকভারি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজ মুখে সেই ধরনের অবাক করা তথ্য দিয়েছেন অনেক মেধাবী। তাদের বেশিভাগই বলেছেন, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ও পারিবারিক নানা সংকটের মধ্যে নেশার জগতে ঢুকে পড়েন।


আমিক যশোরে চিকিৎসাধীন সাতক্ষীরার নলতা এলাকার মামুন হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে অনার্স পাড়ার সময় থেকে ফেনসিডিল সেবনের মাধ্যমে নেশাগ্রস্ত হই। আমার চাচা ক্ষতি করতেই কৌশলে নেশা করাতেন। কোনো রকম অনার্স শেষ করলেও চাকরি করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, নেশার কারণে শরীরের এমন অবস্থা হয়ছিল বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না। এখন ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছি। আর কোনো দিন নেশা করবো না বলে প্রতিজ্ঞা করেছি।


যশোরে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক থাকা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের যুবক ইসমাইল হোসেন বলেন, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডার মধ্যে মাদক সেবন শুরু করি। বাবা-মায়ের অনেক টাকা নষ্ট করেছি। এজন্য পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। এক বছর ৪ মাস মতো আমি নেশা ছেড়ে দিয়েছি।


তিনি বলেন, নেশা কোনো স্বপ্ন দেখায় না; স্বপ্ন কেড়ে নেয়, ধ্বংস করে। তাই নেশাকে না বলতে হবে।


ঝিনাইদহের শৈলকূপার দোহাখোলা গ্রামের মোহায়মিনুর আলম বলেন, যখন নেশা করতাম তখন সবাই বাকা চোখে তাকাতো। আমার নেশা ছাড়তে পিতা নানাভাবে চেষ্টা করেন। তিনি (বাবা) বন্ধুর মতো পাশে থেকেছেন। আর নেশাগ্রস্ত বন্ধুদের সাথে মিশতে নিষেধ করেন। আট বছর হলো আর নেশা করছি না। আহছানিয়া মিশন মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক আছি। নিজের জীবনকে নতুন করে সাজাতে চাই।


শুধু মোহায়মিনুর আলম, ইসমাইল হোসেন, মামুন হোসেনরা নয়, নেশা ছেড়ে আলোর পথে আসতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমিক যশোর কেন্দ্রে চিকিৎসারত ৫৫ যুবক। মঙ্গলবার রাতে মাদক রিকভারিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পুনরায় সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আমিক যশোর কেন্দ্রের ম্যানেজার আমিরুজ্জামান লিটন। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুর রহমান।


বক্তব্য রাখেন- প্রথম আলোর যশোর প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, আমিক যশোর কেন্দ্রের কাউন্সিলর আবু হাসান মন্ডল, চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও এডাব যশোরের সদস্য সচিব শাহজাহান নান্নু।


বিবার্তা/তুহি/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com