শিরোনাম
সিলেটের সড়ক জুড়ে বন্যার ক্ষতচিহ্ন
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০১৮, ২১:১৫
সিলেটের সড়ক জুড়ে বন্যার ক্ষতচিহ্ন
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, মৌলভীবাজার
প্রিন্ট অ-অ+

পৌর শহর থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন বন্যার ক্ষতচিহ্ন বহন করছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে ভাঙ্গন ও খানাখন্দ দেখা দিয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হচ্ছে এসব ভাঙ্গাচোরা।


মৌলভীবাজারের বন্যা কবলিত এলাকার অধিকাংশ রাস্তারই এখন করুণ অবস্থা। বন্যার পানির তীব্র স্রোতে রাস্তাগুলো ভেঙ্গে গেছে। ফলে বেহাল হয়ে পড়েছে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।


সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, বন্যায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া, ব্রাহ্মণবাজার-শমসের নগর, রবির বাজার-পীরের বাজার, জুড়ি-ফুলতলা, মৌলভীবাজার-শমসের নগর-চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন ও মৌলভীবাজার পৌরসভার যোগীডর এলাকার বাস টার্মিনালের কাছে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশের একাধিক জায়গা ভেঙ্গে গেছে।



এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৌলভীবাজার-শমসের নগর-চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনের সড়কটি। এ সড়কের শরিফপুর ইউনিয়নের মনু নদের সেতুর পাশে একটি বড় কালভার্ট দেবে গেছে এবং প্রায় ৪০ মিটার সড়ক অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ কারণে চাতলা শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।


স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, পানির তীব্র স্রোতে তাদের মোট ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পাকা সড়কের অন্তত ৪০০ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে আদমপুর, আদমপুর-ইসলামপুর, আদমপুর-মাধবপুর, ভানুগাছ-মাধবপুর উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার অধিকাংশ পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।



জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, মনু ও ধলাই নদের ২৫টি স্থান এবং কুশিয়ারার একটি প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়ন এবং কমলগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন পাকা সড়কে বড় বড় গর্ত হয়েছে।


গত ১২ জুন থেকে শুর হওয়া ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট প্লাবনে মৌলভীবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিল। মৌলভীবাজার সদরের সঙ্গে সিলেট ও জেলার ৪ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ৩ দিন বন্ধ ছিল। পানি নেমে যাওয়ায় এখন বেরিয়ে আসছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। এখনো পৌর শহরের সেন্ট্রাল রোডটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে সেদিকে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যা কবলিত ৪ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো মেরামত করে কোনোরকম যোগাযোগ সচল রাখা হয়েছে। তবে বন্যা পরবর্তী সময়ে সড়কের বেহাল দশা হওয়াতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।



সরেজমিন রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মনু নদের ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে মৌলভীবাজার-রাজনগর ভায়া সিলেট ও কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বিশালাকার জায়গা জুড়ে ভাঙন রয়েছে। সেখানে ইট পাথর ফেলে যোগাযোগ সচল রাখলেও রাস্তাটি দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে পড়েছে।


এছাড়া পানির তোড়ে রাস্তার পাশ ভেঙ্গে সংকীর্ণ হয়ে আছে। সেখানে বালির বস্তা ফেলে পাশ চওড়া করে রাখা হয়েছে। ঢলের পানিতে ক্ষয়ক্ষতির এমন চিহ্ন পৌর এলাকায়ও রয়েছে। ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কের বড়হাট এলাকায় ডিভাইডিং ভেঙে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গর্ত ও খানাখন্দ রয়েছে। কোথাও আবার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ভাঙন রয়েছে। এসব রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করছে।



পৌর বাস টার্মিনালে হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক ছালিক মিয়া জানান, সিলেট থেকে মৌলভীবাজারে ঢোকার ৪ কিলোমিটার রাস্তা এতো বেশি ভাঙ্গাচোরা যে- এটুকু আসতে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় লেগেছে।


এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম জানান, চার উপজেলায় ছোট বড় অনেক সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। পানির তোড়ে সড়কের পিচ, খোয়া ও মাটি ভেসে গেছে। সড়কের মুখে ও বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল গর্ত হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কার ও মেরামতের জন্য কমপক্ষে শত কোটি টাকার বেশি লাগতে পারে।



সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ জানান, বন্যায় সওজের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে আরো কিছু সময় লাগবে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে মেরামতে উদ্যোগ নেয়া হবে।


বিবার্তা/আরিফ/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com