শিরোনাম
নীলফামারীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০১৮, ১১:৫৬
নীলফামারীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

এবারে বর্ষা মৌসুমে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী এলাকাকে বন্যামুক্ত রাখতে চার কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনশ’ ৬০ মিটার দীর্ঘ বালুর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে নির্মিত বাঁধটি করা হয়নি দৃঢ়করণ। বাঁধের উপর জিও টেক্সটাইল না বিছিয়েই পিচিং করা হয়েছে সিসি ব্লক। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি চুইয়ে কিংবা বানের পানির তোড়ে বাঁধটি তিস্তা গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা এলাকাবাসীর।


বিগত ২০১৬ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভারতের কুচলিবাড়ী ও বাংলাদেশের ডিমলা উপজেলার চড়খড়িবাড়ী জিরো পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি বিধ্বস্ত হয়। এতে টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি, পূর্ব খড়িবাড়ি, টাবুর চর, পূর্ব টাবু, জিঞ্জিরপাড়া, একতাপাড়া ও মুন্সিপাড়ার ভিতর দিয়ে তৈরি হয় তিস্তা নদীর একটি চ্যানেল। এ চ্যানেল দিয়ে প্রবাহিত পানিতে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে ওইসব এলাকা। বন্যা কবলিত অন্তত চার হাজার পরিবার আশ্রয় নেয় সিল্টট্রাফ বাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে। বানের পানিতে ভেসে আসা বালুতে ওইসব পরিবারের উর্বর আবাদি অনেকটাই ভরাট হয়ে যায়।


তিন ফসলী হাজার হাজার বিঘা উর্বর জমি হয়ে পড়ে অনাবাদী। সুখী ও সচ্ছল পরিবারগুলো হয়ে পড়ে কাঙ্গাল। গত রবিবার সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় চর খড়িবাড়ী গ্রামে বাঁধ ঘেঁষা পাড়ার অনেকের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা অভিযোগ করে বলেন, মাত্র ১০ফুট দুরে ছয়টি বোমা মেশিন বসিয়ে তিস্তা নদী থেকে বালু তুলে তৈরি করা হয়েছে বামতীর বাঁধ। বাঁধে এক মুঠো মাটিও ফেলা হয়নি।


বাঁধটি মেশিন দিয়ে করা হয়নি কমপেক্ট। বন্যার কবল থেকে এ এলাকাকে বাঁচাতে সরকারের দেয়া টাকায় দায়সারাভাবে নির্মাণ করা হয় তিনশ’ ৬০ মিটার দীর্ঘ বালুর বাঁধ। বোমা মেশিন দিয়ে তিস্তা নদী থেকে তুলে আনা পাথর না ভেঙ্গেই তা দিয়ে তৈরি করা হয় সিসি ব্লক। এসব ব্লক তৈরি করতে দেয়া হয়েছে এক বস্তা সিমেন্ট, ছয় ফেরা বালু ও ১২ ফেরা চকলেট পাথর। বাঁধের উপর জিও টেক্সটাইল না বিছিয়েই পিচিং করা হয়েছে ওইসব সিসি ব্লক।


ভারী বর্ষণ হলে সিসি ব্লকের ফাঁক দিয়ে পানি চুয়ে বাঁধের বালু ধ্বসে গিয়ে পড়বে তিস্তা নদীতে। কিংবা তিস্তা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে পানির তোড়ে বাঁধ বিলীন হবে তিস্তা গর্ভে। আবারো বন্যা কবলিত হয়ে পড়বে টেপা খড়িবাড়ি ইউনিয়নের ওইসব এলাকা। বন্যা কবলিত হয়ে সর্বস্ব হারাবে হাজারো পরিবার।


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া (প ও র) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরীর কাছে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বিবার্তাকে বলেন, এই এলাকায় মাটি না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিস্তা থেকে মেশিন দিয়ে বালু তুলে বামতীর বাঁধ নির্মাণ করা হয়। মেশিন দিয়ে বালু কমপেক্ট করে জিও টেক্সটাইল বসিয়ে পিচিং করা হয়েছে সিসি ব্লক। বানের পানির তোড়ে এ বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।


অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ফেনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে নীলফামারী-০৩ আসনের সংসদ সদস্যের ছেলে আশরাফুজ্জামান জুয়েল সাব কন্টাক্টে কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন। সাব কন্টাক্টে কাজ করার বিধান আছে কীনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।


বিবার্তা/সুমন/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com