শিরোনাম
ঈদের আমেজ নেই মৌলভীবাজারের পানিবন্দী শতাধিক গ্রামে
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০১৮, ২২:৪৯
ঈদের আমেজ নেই মৌলভীবাজারের পানিবন্দী শতাধিক গ্রামে
তানভীর আঞ্জুম আরিফ, মৌলভীবাজার
প্রিন্ট অ-অ+

দুয়ারে এসে গেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু ঈদের আমেজ নেই মৌলভীবাজারের ৩টি উপজেলার লাখো মানুষের জীবনে। আকস্মিক প্লাবনে ডুবে গেছে ফসল ও ঘরবাড়ি। চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।


বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হওয়ায় ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার মানুষ। এমনকি ঈদের নামাজ আদায় করার জায়গাও নেই অনেক এলাকায়।


কমলগঞ্জের কিছু জায়গা থেকে পানি নামলেও রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। চরম দুর্ভোগে থাকা এলাকাগুলোতে পৌঁছায়নি পর্যাপ্ত ত্রাণ।


জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় প্রশাসনের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রশাসনের যেসব বিভাগ বন্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত সেসব বিভাগের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এরমধ্যে মধ্যে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ প্রশাসন, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় অফিস, উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড অন্যতম।


প্লাবিত ৩টি উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে রাজনগরে ৪২টি, কুলাউড়া ৬০টি, কমলগঞ্জে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।


ঈদের জামাত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নিজ নিজ এলাকার উঁচু জায়গাতে আয়োজন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কমলগঞ্জের কিছু এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে কমলগঞ্জ থেকে নামলেও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে রাজনগরের ২২টি এবং কুলাউড়ার ৪০টি গ্রাম।


ভারতের ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের হওয়ায় গত ৩ দিনের টানা বর্ষণ এবং উজানের ঢলে বেড়েছে মৌলভীবাজারের মনু নদ ও ধলাই নদীর পানি। প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৩টি স্থানে প্লাবিত হয় জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলার ১৩২টি গ্রাম।



ঈদের সময়ে বাড়ি-ঘরে পানি ঢোকায় নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় অন্যত্র সরে যেতে দেখা যাচ্ছে এইসব এলাকার মানুষদের। এসব এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে গরু-ছাগল ও গবাদি পশুগুলো ছুটছে যে যার মত। গৃহস্থের পুকুরের মাছ স্রোতে ভেসে গেছে।


বসতভিটা এবং জিনিষপত্র পানির নিচে রেখে পানিবন্দী মানুষদের ঈদ আনন্দ মলিন হয়ে গেছে। কমলগঞ্জ উপজেলা রহিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল বাছিত বিবার্তাকে জানান, এক মাস সিয়াম সাধনার পর আনন্দের ঈদ আসে। কিন্তু এ বছর এই সময়ে ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় সে আনন্দ আর নেই।


সদর উপজেলার ইমন আহমদ বিবার্তাকে জানান, মৌলভীবাজার জেলার আকস্মিক বন্যার খারাপ পরিস্থিতি দেখে খুব মন খারাপ লাগছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরে নিজের জেলার পানিবন্দী মানুষের কথা ভাবতেই মনটা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।


রাজনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার বিবার্তাকে জানান, রাজনগরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। তাদের সাহায্য করছে প্রশাসন।


কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক বিবার্তাকে জানান, কমলগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত। বুধবার থেকে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে।


কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বানী বিবার্তাকে জানান, শুকনো খাবার ইতোমধ্যে এলাকাগুলোতে পাঠানো হয়েছে। তবে বৃষ্টির জন্য বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না হয়তো।



মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম বিবার্তাকে জানান, প্লাবিত উপজেলাগুলোর জন্য ১১৫ টন খাদ্য এবং ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কুলাউড়ায় ৫০ টন চাল এবং ৫০ হাজার টাকা, কমলগঞ্জে ৪৫ টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা, রাজনগরে ১৫ টন চাল ও ২০ হাজার টাকা এবং শ্রীমঙ্গলের জন্য ৫ টন চাল ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।


বিবার্তা/আরিফ/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com