শিরোনাম
প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না পাহাড়ে বসবাসকারীরা
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০১৮, ১৩:৫৪
প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না পাহাড়ে বসবাসকারীরা
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গত চারদিনের একটানা ভারী বর্ষণের কারণে বান্দরবানের লামা উপজেলায় পাহাড় ধসে হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন নিয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কিছুতেই সরতে রাজি হচ্ছে না এসব লোকজন।


উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের মাইকিং, আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া, পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং দুয়ারে-দুয়ারে গিয়ে প্রশাসনের অনুনয়-বিনয় কিছুতেই গলছে না পাহাড়ে বসবাসরতদের মন। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে এখনো প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।


জানা যায়, সর্বশেষ ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী উপজেলার ৬৭১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৬ হাজার ৬৩টি পরিবার রয়েছে। আগের তুলনায় বর্তমানে এর সংখ্যা বাড়বে বলে পরিসংখ্যান অফিস সূত্র জানিয়েছে। সে হিসেবে এ উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙ্গালী মিলে প্রায় দু’লাখ মানুষের বাস। এদের মধ্যে ৮০শতাংশ মানুষ ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ৮শ-১৫শ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া, পাদদেশ কিংবা পাহাড়ের কোলঘেঁষে বসবাস করে আসছে। যার বেশিরভাগই পুনর্বাসিত ও অজ্ঞ।


তারা ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব উপজেলায় পুনর্বাসিত হয়ে পাহাড় কেটে বসবাস শুরু করে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে।


বেসরকারি হিসেব মতে, লামা পৌরসভা ও লামা সদর, গজালিয়া, রূপসীপাড়া, সরই, আজিজনগর, ফাঁসিয়াখালী, ফাইতং ইউনিয়নে সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। রাঙ্গামাটি জেলার নালিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ১১ জন নিহত হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে।


সরেজমিন দেখা যায়, লামা পৌরসভা এলাকার চেয়ারম্যান পাড়া, নারকাটাঝিরি, হাসপাতাল পাড়া, বরিশাল পাড়া, বড়নুনারবিল পাড়া, চাম্পাতলী, নয়াপাড়া, সাবেকবিলছড়ি, রাজবাড়ী, কলিঙ্গাবিল, কাটাপাহাড়, মধুঝিরি এবং লামা সদর ইউনিয়নের লাইনঝিরির আগা, পশ্চিম মধুঝিরি, ডলুঝিরি, হাসপাতাল পাড়ায় পাহাড় ধস ঝুঁকিতে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার।


এসব পরিবারের ঘরের কিছু পাহাড়ের পাদদেশে, কিছু কোলজুড়ে আবার কিছু চূড়ায়। একইভাবে উপজেলার আজিজনগর, ফাইতং, রুপসীপাড়া, গজালিয়া ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার। তাদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র মানুষ। তার মধ্যে সাড়ে চার হাজার পরিবারই অতিঝুঁকিতে বসবাস করে আসছে।


এসব পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জন্য বর্তমানে উদ্বিগ্ন উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হলেও, কিছু পরিবার নিরাপদে কিংবা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও বেশিরভাগ এখনো সরে যায়নি।


গত কয়েকদিনের বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পাহাড় ধসে পৌরসভা এলাকাসহ ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি পাহাড় ও বসতঘর বিধস্ত হয়েছে। এ বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পাহাড় ধসে জানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।


ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী জামাল, আনোয়ার, বদিউর রহমানসহ আরো অনেকে জানান, আমরা গরীব মানুষ, এখানে সমতলের জমির দাম আকাশ ছোঁয়া। এত দরে আমাদের পক্ষে জমি কেনা অসম্ভব। পাহাড়ের জমি সমতল ভূমির চেয়ে অনেক সস্তা। তাই পাহাড়ের জমি কিনে বসবাস করছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য মাইকিং শুনেও কাজে লাগাতে পারছি না। সরকার যদি আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে যেতে পারতাম।


এ বিষয়ে ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, বার বার তাগিদ দেয়ার পরও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীরা সরে যাচ্ছে না। সরে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি ঝুঁকিপূর্ণদের বরাত দিয়ে বলেন, এলাকার বেশির ভাগ মানুষ গরীব। তাই নতুন করে নিরাপদ স্থানে ঘর তৈরি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।


লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা এলাকায় যারা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বার বার মাইকিং এর মাধ্যমে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে খোলার পাশাপাশি আশ্রয়গ্রহিতাদের জন্য খাবার, পানি ও তাদের বাড়ি পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেউ যেতে চায় না।


তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পৌরকর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে তাদের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু এসব লোকজন কোনোভাবে সরছে না। এত কিছুর পরও সরে না গেলে কিছু করার নেই।


এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং এর মাধ্যমে বারবার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষকেও ঝুঁকিপুর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিতে বলা হয়েছে। এর পরও সরে না গেলে প্রশাসন কঠোরতা অবলম্বন করবে।


বিবার্তা/নুরুল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com